জার্মান শিক্ষার্থী
১০ ডিসেম্বর ২০১২ডানিয়েল ক্লি প্রতি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে নানা কাজে সাহায্য করে থাকেন৷ নয় বছরের ছোট্ট ডাভিডকে স্কুলের কাজ দেখিয়ে দেন, তাকে রাতের খাবার তৈরি করে দেন৷ আবার সকাল বেলায় উঠে তাকে স্কুলে নিয়ে যান৷ এভাবে গত একবছর ধরে জাবিনে মোজানোভস্কি আর তার একমাত্র সন্তানকে সাহায্য করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ডানিয়েল৷ এর বিনিময়ে তাদের সঙ্গেই থাকছেন তিনি৷ আর তাকে পেয়েও বেশ খুশী গৃহকত্রী জাবিনে মোজানোভস্কি৷ তার একমাত্র ছেলে ডাভিডের কাছেও ডানিয়েল বড়ভাইয়ের মতই৷ জাবিনে বলেন, ‘‘এভাবে একসঙ্গে থাকাটা সত্যিই চমৎকার৷ কারণ ডানিয়েল নিজের কাজ নিজেই করে৷ এবং সে সবসময়ই তার কাজের বেলাতে সজাগ৷ আমরা যতটুকু সম্ভব আমাদের কাজের সময় মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি৷ আমার হয়তো কখনো বেশি কাজের চাপ থাকে আবার ওর হয়তো পরীক্ষা থাকে৷ তবে আমরা চেষ্টা করি একজন আরেকজনকে সাহায্য করে সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতে৷''
জার্মানির ‘ভোনেন ফ্যুর হিল্ফে' প্রকল্পের সাহায্য নিয়েই ডানিয়েল এভাবে জাবিনের পরিবারকে খুঁজে পেয়েছে৷ এতে একদিকে তিনি যেমন কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন অন্যদিকে পরিবারটিকেও সাহায্য করতে পারছেন৷ ডানিয়েলের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীই এভাবে তাদের নিজেদের বাসস্থান খুঁজে পেয়েছে৷ জার্মানিতে অনেক বয়স্ক লোক একা একটি বাসাতে থাকেন৷ তারা এই ধরনের ছাত্র-ছাত্রী খোঁজেন যারা থাকার বিনিময়ে তাদের প্রতিদিনের কেনাকাটা, রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করতে পারবে৷
ডানিয়েল ক্লি অবশ্য শুরুতেই জাবিনের বাসা খুঁজে পাননি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর হোস্টেলে না থেকে তিনি একটি মেসে থাকা শুরু করেন৷ তবে সেখানেও খরচ ছিলো অনেক৷ তাই তিনি ‘ভোনেন ফ্যুর হিল্ফে' এর দ্বারস্থ হন৷ ডানিয়েল বলেন, ‘‘আবেদন করার একমাস পর আমি জবাব পাই৷ এরপর আমি এই প্রকল্পের লোকদের সঙ্গে দেখা করি৷ প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে দুই সপ্তাহর জন্য এই বাসাতে আসি৷ যখন দেখা গেলো আমার সবকিছু ঠিক আছে তখন পুরোপুরি থাকতে শুরু করি৷''
জার্মানদের সব কিছুই যেমন ধরা বাধা নিয়মে চলে৷ এই ক্ষেত্রেও তাই৷ যেমন একজন ছাত্র যত বর্গমিটার কক্ষে থাকবে তাকে প্রতি সপ্তাহে তত ঘণ্টা গৃহকর্তা বা গৃহকত্রীকে সাহায্য করতে হবে৷ ডানিয়েল ১৮ বর্গমিটারের একটি কক্ষে বাস করেন৷ তবে জাবিনে এতটা ধরাবাধা নিয়মের পক্ষপাতী নন৷ তিনি জানান, ‘‘আমার জন্য যেটা চমৎকার তা হলো সবকিছুই অনেক শিথিল৷ প্রথমে আমি ওকে বলেছিলাম কতঘণ্টা হয়েছে সেটা লিখে রাখতে, আমি সেটা পারবো না৷ পরে দুই এক মাসের মধ্যেই আমরা সেটা ঠিক করে ফেলেছিলাম৷ আমি আসলে অতটা কড়া নিয়ম কানুন প্রয়োজন বলে মনে করি না৷''
জার্মানিতে এই প্রকল্পের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক সুবিধা হয়েছে৷ ভিন্ন পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে৷ গড়ে ওঠে নানা মানসিকতার মানুষের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন৷ আর দিন দিন এই প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের আগমনও বাড়ছে, জানালেন এই প্রকল্পের কোলন শাখার কর্মকর্তা হাইকে বারমন্ড৷ তার ভাষায়, ‘‘প্রতি বছর আমরা এরকম ৭০টি বাসা খুঁজে দেই৷ তবে এই বছর এর ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে৷ এবং আমাদের ধারণা আগামী বছর এটি দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷''
জার্মানিতে দিন দিন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর আগমন বাড়ছে৷ তাই দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটও৷ একটি পরিবারকে সাহায্যের বিনিময়ে আবাসনের এই প্রকল্প সেই সংকট নিরসনে যে ভূমিকা রাখবে সেটা বোঝা যাচ্ছে৷