জার্মানিতে তিন ধরনের স্কুল
২০ ডিসেম্বর ২০১৩এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ কেননা প্রতিটি শিশুকেই প্রয়োজন জার্মানির৷ প্রাথমিক স্কুলে মাইকে ও মুরাত, আইলিন ও আব্দুল কাদের, ইওনাস ও ইউলিয়া পাশাপাশি বসে৷ কিন্তু ‘গিমনাসিউম' বা হাইস্কুলে বিদেশি বংশোদ্ভূত খুব কম ছেলেমেয়েকেই দেখা যায়৷ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভিনদেশি নামও খুব একটা শোনা যায় না৷ জার্মানির স্কুলগুলির স্বাভাবিক চিত্র এটা৷ শিক্ষিত ও বিত্তশালীদের ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার মতোই গিমনাসিউম বা হাইস্কুলে যায়, দেয় ফাইনাল পরীক্ষা ‘আবিট্যুর'৷ অসচ্ছল ও স্বল্প শিক্ষিত পরিবারের ছেলেমেয়েদের পক্ষে প্রায়ই হাইস্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় না৷
বহু ছাত্রছাত্রী আগেই স্কুল ছেড়ে দেয়
অনেক ছাত্রছাত্রী ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই স্কুল ছাড়ে৷ পরিমাণটা ছয় থেকে সাত শতাংশ৷ এর মধ্যে অনেক ছেলেমেয়েই বিদেশি বংশোদ্ভূত৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কম মনে হলেও জার্মানির মতো অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী একটি দেশের পক্ষে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি৷
জার্মানিতে রয়েছে তিন ধরনের স্কুল
জার্মানির তিন ধরনের স্কুল সিস্টেমের কারণেই এই ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়৷ জার্মানির প্রতিটি রাজ্যেই ছাত্রছাত্রীরা দশ বছর বয়সের মধ্যেই বাছাই হয়ে যায়৷ বিভিন্ন মানের স্কুলে যেতে হয় তাদের৷ ভাল স্কোর হলে ‘গিমনাসিউম'; মাঝারি হলে ‘রেয়ালশুলে'; আর বাদ বাকিদের জায়গা হয় ‘হাউপ্টশুলে'-তে৷
হাউপ্টশুলেতে ছেলেমেয়েদের ক্যারিয়ার করা বা কোনো ভাল পেশায় ঢোকার সুযোগ খুব কম৷ বৈষম্যমূলক এই বাছাইপর্বে অল্পবয়সেই বাচ্চাদের অনেকটা ‘ব্যর্থ' বলে চিহ্নিত করা হয়৷ বিষয়টা শুধু হৃদয়হীনই নয়, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও অবিবেচনাপ্রসূত৷ কেননা আধুনিক অর্থনীতিতে প্রশিক্ষণ ছাড়া ভাল কাজ পাওয়া যায় না৷ এখন প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও শিক্ষিত কর্মী৷ সব ছেলেমেয়েকে যে আবিট্যুর দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ তবে ফাইনাল না দিয়ে স্কুল ছাড়া ছেলেমেয়ের সংখ্যাটা যতটা কম হয়, ততই ভাল৷ কেননা জার্মানিতে জন্মের হার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে৷ তাই বাচ্চাদের কাট-ছাঁট করে এক দলকে বাদ দেওয়ার সামর্থ্য জার্মানির নেই৷ শুধু মাত্র ধনী বাবা-মার সন্তান নয়, সব বাচ্চাকেই প্রয়োজন জার্মানির৷
সুশিক্ষার সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক
ইদানীং জার্মানিতে দামি বেসরকারি স্কুলের ধুম পড়েছে৷ সেখানে রয়েছে ছোট ছোট ক্লাস, ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধান, স্বনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা, উদ্যোগী শিক্ষক ইত্যাদি৷ বিত্তশালীদের ছেলেমেয়েরাই এই সব স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়৷
তবে সুশিক্ষা মানিব্যাগের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না৷ সব স্কুলেরই এমন হওয়া উচিত, যেখানে বাচ্চারা তাদের যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারে, পরস্পরের কাছে থেকে শিখতে পারে, যেখানে শিক্ষক ও ছাত্ররা পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখান৷
তাই বলা যায় পিসা-জরিপে কিছুটা ভাল ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না সংশ্লিষ্টদের৷ শিক্ষাক্ষেত্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চিন্তাভাবনা করতে হবে৷