জার্মানিতে রাজনৈতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে দুশ্চিন্তা
৬ মে ২০২৪জার্মানির দলীয় রাজনীতি এতকাল যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক ও সংঘাতের মুখ দেখলেও হিংসার কবল থেকে সার্বিকভাবে মুক্ত ছিল৷ কিন্তু কয়েকটি সাম্প্রতিক ঘটনা জার্মান রাজনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে৷ বিশেষ করে আগামী জুন মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রার্থী ও নেতারা অভূতপূর্ব আক্রোশের শিকার হওয়ায় দেশজুড়ে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ গত শুক্রবার রাতে পূবের ড্রেসডেন শহরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিদায়ী প্রতিনিধি মাটিয়াস একে-র উপর নৃশংস হামলার পর দলমতনির্বিশেষে নিন্দার ঝড় দেখা যাচ্ছে৷ রোববার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষ এই হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান৷ ড্রেসডেন শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রায় ৩,০০০ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের এসপিডি দলের নেতা মাটিয়াস একে শুক্রবার রাতে নির্বাচনি পোস্টার লাগানোর সময়ে চার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তার উপর হামলা চালায়৷ চরম আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অপারেশন করাতে হয়৷ শলৎস-সহ একাধিক জার্মান রাজনীতিক তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ শলৎস এমন হিংসাত্মক ঘটনাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন৷
রোববার ভোরে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে৷ পুলিশ সূত্র অনুযায়ী হামলার কথা স্বীকার করলেও সে এর কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু বলে নি৷ স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমিন শুস্টার জানিয়েছেন, বাকি তিন হামলাকারীর সন্ধান চলছে৷ তাদের বয়স ১৭ থেকে ২০ বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের কাছেই সবুজ দলের এক কর্মীও পোস্টার লাগানোর সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ একে-র উপর হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা সম্ভবত চরম দক্ষিণপন্থি শিবিরের অংশ৷
গত দুই সপ্তাহে জার্মানিতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপর হামলা বা তাদের বিরুদ্ধে বৈরি আচরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে৷ জার্মানির পশ্চিমে এসেন শহরে দুই নেতা প্রচারের সময়ে গালিগালাজের মুখে পড়েছিলেন৷ সবুজ দলের এক নেতা পূবের এক শহরে বিক্ষোভকারীদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন৷ পুলিশের হিসেব অনুযায়ী ২০২৩ সালে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের ২,৭৯০টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে৷ ২০২১ সালে সেই সংখ্যা ছিল ১,৮০৬৷ চলতি বছরে সেই সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার চলতি সপ্তাহে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক জরুরি বৈঠক ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন৷
জার্মানির এসপিডি দলের নেতা সাসকিয়া এসকেন শুক্রবারের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে গণ্য না করার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ তাঁর মতে, কোনো শূন্যতার মাঝে এমন হিংসার ইচ্ছা জন্মায় নি৷ তিনি বিশেষ করে গণতন্ত্রের প্রতি চরম দক্ষিণপন্থি দল ও সেই শিবিরের কট্টরপন্থিদের ঘৃণাকে এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন৷ সাংবিধানিক রাষ্ট্র হিসেবে তিনি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার করেন৷ সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি৷
এসবি/কেএম (এএফপি, ডিপিএ)