জার্মানিতে যৌনবৈষম্য
২৮ জানুয়ারি ২০১৩জার্মানির মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের নেতা রাইনের ব্রুডার্লে সদ্য আগামী সংসদীয় নির্বাচনে দলের মুখ্য প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন৷ ওদিকে এই প্রবীণ রাজনীতিককে নিয়ে অন্য একটি ঝড় উঠেছে ‘স্টের্ন' সাপ্তাহিকে প্রকাশিত একটি খবরের কারণে৷
স্টের্নের এক মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, ব্রুডার্লে নাকি তাঁকে একটি পার্টিতে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কমপ্লিমেন্ট দেন, তাঁর বক্ষদেশ সম্পর্কে৷ তিনি নাকি দক্ষিণ জার্মানির ‘‘একটি ডির্ন্ডল ড্রেস সহজেই ভরাট করতে পারবেন''৷ মন্তব্যটা প্রশংসার রূপে এলেও, এটা যে নারী হিসেবে সাংবাদিকার যৌন আকর্ষণীয়তার প্রতি ইঙ্গিত, তা'তে কোনো সন্দেহ নেই৷
একজন বয়স্ক পুরুষের মুখ থেকে এ ধরনের মন্তব্য শুনে হাসা যায়, আবার তার বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করা যায়৷ এই দ্বিতীয় পন্থাই বেছে নেন অপর দুই তরুণী, এবং তাঁদের মাধ্যম হয় টুইটার৷ টুইটারে ‘‘আউফশ্রাই'' বা ‘চিৎকার' হ্যাশট্যাগ দিয়ে তাঁরা অপরাপর মহিলাদের এ'বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানাতে বলেন৷ আসে এক অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া৷
উদ্যোক্তা দুই মহিলার একজন, নিকোল ফন হর্স্ট, ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমি এতোটা সাড়া প্রত্যাশা করিনি৷ ‘আউফশ্রাই' হ্যাশট্যাগ দিয়ে যতো টুইট এসেছে, তার সব ক'টা পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা৷''
আসল ছবিটা
যৌনবৈষম্যের আশ্চর্য সব উদাহরণ: এক তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর যখন হাসপাতালে শুয়ে আছেন, তখন এক ডাক্তার এসে তাঁর নিতম্ব চাপড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ অথবা ট্রেন থেকে নামার পর কোনো সম্পূর্ণ অপরিচিত পুরুষ যখন এক মহিলাকে ‘একটু দাঁড়াও, সুন্দরী' বলে অভিবাদন জানান৷
এ'সব কাহিনির সত্যতা যাচাই করার উপায় না থাকলেও, সব মিলে আসল ছবিটা ভীতিকর৷ যেন এই সমৃদ্ধিশালী, আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে যৌনবৈষম্য ঢুকে রয়েছে৷ লোলুপ দৃষ্টিতে মহিলাদের দিকে তাকিয়ে থাকা, খেলাধুলার শিক্ষক যিনি ছাত্রীদের বক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকেন, ট্রেনে, রাস্তায়, ডিস্কোয়, কাজের জায়গায় পুরুষদের ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা৷ এছাড়া পরিবারের সদস্যদের তরফ থেকে যৌন হয়রানি এমনকি আক্রমণের কাহিনি তো আছেই৷
পার্থক্যটা এই
অনেক পুরুষও টুইটার করে তাদের সংহতি প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু গোটা অভিযানটা মিডিয়ার নজর কেড়েছে শুধু একটি কারণে, মহিলারা যে এমন বিপুল সংখ্যায় ও এতো ব্যাপকভাবে তাদের যে সব যৌনবৈষম্য সহ্য করতে হয়, সে সম্পর্কে এবং তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবেন, সেটা বোধহয় রাজনীতি কি মিডিয়ার কেউই কল্পনা করতে পারেননি৷
ইন্টারনেট ‘ট্রল'-দের বাধা দেবার, অথবা পুরো ব্যাপারটাকে হাস্যকর করে তোলার সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই টুইটার অভিযান সফল হয়েছে কেননা এর মাধ্যমে মহিলারা তাদের একটি ব্যক্তিগত ক্ষত ও বেদনা জ্ঞাপন করার পথ ও পন্থা খুঁজে পেয়েছেন৷ এর পরের কাজ হবে, জার্মান ভাষায় এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করা, যেখান থেকে মহিলারা এ'ধরনের পরিস্থিতিতে কি করা যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ পাবেন, যৌন-বৈষম্য প্রতিরোধের সফল কাহিনিও শুনবেন, বললেন নিকোল ফন হর্স্ট৷