জার্মানিতে ব্রিটেনের গুপ্তচর
৭ নভেম্বর ২০১৩ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আমলেই বিভক্ত বার্লিন ছিল বিশ্বের স্পাই হেডকোয়ার্টার্স, স্পাই নভেলের ভক্তরা সে কথা ভালো করে জানেন৷ ঠাণ্ডা লড়াই অনেক আগেই শেষ হয়েছে – অন্তত খাতাপত্রে৷ কিন্তু আজও বার্লিনে দূতাবাসগুলোর মাথায় মাথায় অ্যান্টেনা, তার নীচে ঘরে ঘরে স্পাই? ‘‘বার্লিনের কেন্দ্রে ব্রিটেনের গোপন আড়ি পাতার ঠাঁই'', এই শীর্ষক দিয়ে ব্রিটেনের ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট' পত্রিকা যে খবর ছেপেছে, তার অর্থ দাঁড়ায়, শুধু মার্কিনিরাই নয়, খোদ জার্মানির ইইউ সতীর্থ ব্রিটেনও নির্দ্বিধায় তাদের বার্লিন দূতাবাস থেকে জার্মান রাজনীতিকদের ওপর আড়ি পেতে থাকে – অন্তত এই মর্মে এডোয়ার্ড স্নোডেনের তোলা অভিযোগ যদি সত্যি হয়৷
ধৈর্যের সীমা
জার্মান সরকারের ধৈর্যের সীমা যে অতিক্রান্ত হয়েছে, তার প্রমাণ একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ: জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বার্লিনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সাইমন ম্যাকডোনাল্ডকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন – ইইউ সতীর্থদের মধ্যে যা সচরাচর ঘটে থাকে না৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে শুধু বলা হয়েছে, ‘‘একটি কূটনৈতিক দূতাবাসের অভ্যন্তর থেকে (বাইরের) টেলিযোগাযোগের উপর আড়ি পাতা আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী''৷
তবে বার্লিনে ব্রিটেনের আড়ি পাতাতে আশ্চর্য হওয়ার ভান করে যে কোনো লাভ নেই, সেটা জার্মান রাজনীতিকরাও জানেন৷ অপরদিকে ব্রিটেনের আড়ি পাতাকে যুক্তরাষ্ট্রের আড়ি পাতার সঙ্গে এক পর্যায়ে ফেলা চলে না, কেননা ব্রিটেনের ক্ষেত্রে এটা হলো একটি ইউরোপীয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশের অপর একটি ইউরোপীয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশের উপর আড়ি পাতার ঘটনা৷ ভাই-ভাই, স্পাই-স্পাই?
সর্ষের মধ্যে ভূত?
দ্বিতীয়ত, এনএসএ কেলেঙ্কারির ব্যাপারে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে কথা বলা – এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো যৌথ পদক্ষেপ নেওয়াটাও এখন ঠিক সেই পরিমাণে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, কেননা ব্রিটেনের ‘অপরাধকে' যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপরাধের' তুলনায় অন্য নিক্তিতে ওজন করা চলে না৷ তাছাড়া যৌথ পদক্ষেপ? ব্রিটেনকে বাদ দিয়ে ইইউ'এর কোনো ‘যৌথ পদক্ষেপ' নেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না৷
শেষ প্রশ্ন: বার্লিনে মার্কিনি অথবা ব্রিটিশ, যারাই গুপ্তচরবৃত্তি চালাক না কেন, জার্মান গুপ্তচর বিভাগ তার টের পাবে না, এটা কেমন করে হতে পারে? জার্মান গুপ্তচরবিভাগগুলির উপর নজর রাখার দায়িত্ব বুন্ডেস্টাগের একটি কমিটির উপর৷ বুধবার সেই কমিটির বৈঠকে সবুজ দলের রাজনীতিক হান্স-ক্রিস্টিয়ান স্ট্রোয়বেলে প্রশ্ন তুলেছেন: বিএনডি, অর্থাৎ জার্মান গুপ্তচরবিভাগের যে শাখা বিদেশে জার্মানির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি চালায়, তারাও কি বিদেশে জার্মান দূতাবাসগুলির উপর স্থাপিত অ্যান্টেনা ব্যবহার করে আড়ি পাতে?
এই স্ট্রোয়বেলে সম্প্রতি মস্কোয় গিয়ে নয়া স্পাই ভার্সেস স্পাই নাটকের যবনিকা উত্তোলনকারী এডোয়ার্ড স্নোডেনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আসেন৷