জার্মানিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য
৬ জুলাই ২০২০নেপালের শিক্ষার্থী দীক্ষা শর্মা জার্মানিতে পদার্থবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা লাভ করতে এসেছেন৷ দীক্ষার ইচ্ছা ছিল পার্ট টাইম চাকরি করে নিজের খরচ চালাবেন৷ ঠিক তা-ই হচ্ছিল৷ কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ দীক্ষার মতো আরো অনেক শিক্ষার্থীর চাকরির সুযোগ ছিনিয়ে নিয়েছে৷ মন্দার ফলে চাকরি হারিয়েছেন তারা৷ ফলে, কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা ছাড়া মাসিক ৫০০ ইউরোর খরচ চালানো দীক্ষার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷
এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে দীক্ষা বলেন, ‘‘গত তিন মাস ধরে আমার সমস্যা হচ্ছিল৷ বাসাভাড়া ও দৈনন্দিন বাজার করার টাকা ছিল না৷ আর আমি বাবা-মায়ের কাছেও হাত পাততে চাইনি৷''
প্রাথমিকভাবে দীক্ষাকে তার রুমমেট কিছু টাকা ধার দেয়৷ কিন্তু তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যন্য বিদেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আরেকটি সুরাহার খবর পান দীক্ষা৷ জার্মানির কেএফডাব্লিউ ব্যাংক বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নামমাত্র সুদে টাকা ধার দিচ্ছে৷ প্রতি মাসে ৬৫০ ইউরোর এই ধার শোধ করতে হবে প্রথম কিস্তিতে টাকা পাবার ১৮ মাস পরে৷ শুধু তাই নয়, মাসে ২০ ইউরো করে ফেরত দিয়েও শোধ করা যাবে এই টাকা৷ আপাতত ২০২০ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত সুদ ছাড়াই এই টাকা পাওয়া যাবে৷২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রাপ্ত অর্থে চালু হবে ৪ শতাংশ সুদ৷
এই বিশেষ প্রকল্প অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীর জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনবে বলে দীক্ষা মনে করেন৷
জার্মান শিক্ষামন্ত্রী আনিয়া কারলিচেকও এই প্রকল্প নিয়ে সন্তুষ্ট৷ গত মাসে একটি সম্মেলনে এই প্রকল্পের ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ধরনের একটি প্রকল্প শুধু ইউরোপে কেন, সারা বিশ্বে নজিরবিহীন৷''
রয়েছে সাহায্যের আরো উপায়
দীক্ষাসহ এই প্রকল্পের আওতায় টাকা ধার নিতে আবেদন করেছিলেন প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী৷ এদের মধ্যে বেশির ভাগই এসেছেন ইরান, ভারত, বাংলাদেশ, সিরিয়া ও টিউনিশিয়া থেকে৷ জার্মান শিক্ষার্থীদের তুলনায় টাকা পেতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আরো এক মাস বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে, কারণ, গোটা প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়ন করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক মাস বেশি সময় লেগে যায়, এমনটাই জানান কেএফডাব্লিউ ব্যাংকের ফিলিপ রাউ৷
কিন্তু কেএফডাব্লিউ-এর এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন শুধু সেই শিক্ষার্থীরা, যারা বর্তমানে পঞ্চম শিক্ষাবর্ষ বা দশম সেমেস্টারের বেশি সময় ধরে পড়ছেন না৷ জার্মানিতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে নিজেদের খরচ চালায়৷ তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, পড়াশোনা শেষ করতে সাধারণের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগছে৷
এমন শিক্ষার্থীদের জন্যও রয়েছে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা৷ ক্যামেরুন থেকে আসা জোয়েল মেকিয়েজের অভিজ্ঞতা তাই বলছে৷ বর্তমানে দশ সেমেস্টারের বেশি সময় ধরে পড়াশোনা করতে থাকা জোয়েল বর্তমানে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনার শেষ প্রান্তে৷ খুব শিগগিরই হাতে পেতে চলেছেন সনদ৷ তার জন্যেও আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আখেন শহরের একটি প্রোটেস্ট্যান্ট শিক্ষার্থী সংগঠন৷
জোয়েল জানান, সাংগঠনিক সাহায্য ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী অর্থ সাহায্যের জন্য হাত পাতছেন বন্ধুবান্ধব বা অন্যান্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে৷ কারণ, অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে সরকারকে টাকা ফেরত দিতে না পারার ভয় প্রবলভাবে কাজ করে৷ ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে টাকা ধার নিতেই স্বচ্ছন্দ তারা৷
রেজিনা ব্রিংকমান/এসএস