জার্মানিতে পড়াশোনা ও চাকরির দ্বৈত ব্যবস্থা
২ মে ২০১১পড়াশোনার শেষে চাই একটি চাকরি – পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করার পর এই আশা সবাই করে৷ অনেকেই সহজে পেয়ে যায় কাঙ্খিত চাকরি আবার অনেকেই বছরের পর বছর বসে থাকে বেকার অবস্থায়৷ জার্মানিতে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সের পাশাপাশি ট্রেনিং দিচ্ছে যা কর্মজীবনে কাজে লাগবে৷
জার্মানিতে বেশ কিছু বিষয়ে বিশেষজ্ঞের অভাব দেখা দেবে – এই সতর্কবাণী অনেকদিন থেকেই উচ্চারিত হয়ে আসছে৷ আর ঠিক একারণেই বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নয় হাইস্কুল শেষেই খোঁজা শুরু করে কাজের৷ অনেকেই পেয়ে যায়৷ আর কাজের পাশাপাশি শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা৷ একারণেই বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করেছে যা কর্মজীবনে সাহায্য করবে এসব ছাত্র-ছাত্রীদের৷ আর তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু কোম্পানি৷ এই কোম্পানিগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা পার্ট টাইম চাকরি করতে পারবে৷ এই চাকরির সুবাদে উঠে আসবে টিউশন ফি এবং হাত খরচ৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকলেই এই কোম্পানিই দেবে চাকরির সুযোগ৷
যা শিখেছি তা প্রয়োগ করতে চাই - সেবাস্টিয়ান
সেবাস্টিয়ান বুনিক ইউরোপীয় ফাখহোখশুলের ছাত্র৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্রুলে অবস্থিত৷ আজ রুটিনে ‘কোম্পানি চালানোর বিভিন্ন কৌশল' নিয়ে ক্লাস রয়েছে৷ সেবাস্টিয়ান ব্যবস্থাপনা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে৷ সে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি কোম্পানিতেও কাজ করে৷ জার্মানিতে অ্যাপ্লায়েড ইউনিভার্সিটিগুলো ইদানিং এই পদ্ধতিটি বেছে নিয়েছে৷ তারা ছাত্র-ছাত্রীদের আগে থেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করে নিচ্ছে৷ অথচ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো সময়মত ক্লাসে আসা, লেকচার নোট করা এবং লাইব্রেরি ওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত রাখে ছাত্র-ছাত্রীদের৷ সেবাস্টিয়ান পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছে সুপারমার্কেট চেইন ‘রেভে'-তে৷ সেখানে সে লজিস্টিক্সের বিষয়টি দেখাশোনা করে৷ সেবাস্টিয়ান বলল,‘‘আমি শুধু মুখস্থ বিদ্যায় আগ্রহী নই, আমি শিক্ষার পাশাপাশি –কী শিখলাম তা জানতে চাই, জানাতে চাই৷ আমি পড়াশোনার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চাই৷ দুটো একসঙ্গে করার সুযোগ আমি পাচ্ছি৷ অনেক অল্প সময়ে আমরা অনেক কিছু শিখছি এবং যা শিখছি তা সঙ্গে সঙ্গেই কাজে লাগাচ্ছি৷ অথচ বড় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা সম্ভব নয়৷''
এই ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে দ্বৈত ব্যবস্থা৷ যে এই ব্যবস্থার আওতায় পড়াশোনা করতে চায় তাকে মানসসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে৷ কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেমেস্টার বিরতি বা ছুটি নেই৷ যখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি কাটাতে ব্যস্ত তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কাজ করছে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিতে৷ এবং এর প্রতিদানে অন্য একটি দেশে একটি সেমেস্টার কাটানোর সুযোগ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়৷ তখন বিনামূল্যে সেই দেশের ভাষাটি শেখানো হয়৷ অন্য দেশের বিভিন্ন রীতি-নীতির সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়৷
পড়াশোনা শেষে কেউ বেকার থাকে না – ক্রাফট
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস বিভাগের কর্মী রেনাটে ক্রাফট বললেন,‘‘কেউ যখন এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হয় তখন সে পুরোপুরি কাজ করতে প্রস্তুত৷ সেটা যে কোন কোম্পানিই হোক না কেন৷ অবশ্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কোম্পনি নির্ধারণ করা থাকে৷ যেখানে পড়াশোনা চলাকালে কাজ করা হয়েছে, যে বিভাগের দায়িত্বে ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল সেই কোম্পানিগুলোই আগ্রহের সঙ্গে এদের চাকরি দেয়৷ পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের এই সুযোগ নিঃসন্দেহে অনেক প্রশান্তি বয়ে আনে৷''
তবে কেউ যখন একই সঙ্গে পড়াশোনা আর চাকরি করে তখন তার হাতে অবসর সময় থাকেই না বলা যায়৷ বিশেষ করে থিসিস জমা দেয়ার সময় দেখা যায় কোন ছাত্র-ছাত্রীই প্রস্তুত নয়৷ তখন বলা হয় কোম্পনির সঙ্গে কাজের পাশাপাশি থিসিস সম্পূর্ণ করতে৷ এবং যে বিষয়ে পড়া হয়েছে তা নয় বরং যে বিভাগে কাজ করা হয়েছে তা নিয়ে থিসিস লিখতে বলা হয়৷
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি৷ সেই সময়ে কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসে৷ তারাই পড়াশোনার খরচের বেশ কিছু দায়-ভার গ্রহণ করে৷ যেমন সেবাস্টিয়েনকে টিউশন ফি দিতে হচ্ছে না৷ তা দিয়ে দিয়ে দিচ্ছে রেভে৷ এর পাশাপাশি সেবাস্টিয়ান প্রতি মাসে বেতনও পাচ্ছে৷ এভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করছে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কোম্পানি৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক