জার্মানিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিপদে দরিদ্র জনগোষ্ঠী
২৩ জানুয়ারি ২০২২একদিকে জাঁকিয়ে শীত, অন্যদিকে বৃষ্টি, তার মধ্যেই পশ্চিম জার্মানির বন শহরের একটা খাবারের দোকানের (টাফেল) সামনে তাঁবু খাটিয়ে অপেক্ষা করছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা৷ টাটকা সবজি, ফল ও অন্য জরুরি জিনিস পাশের সুপারমার্কেট থেকে নিয়ে এসেছেন তারা৷ অবসরকালীন সামান্য ভাতা পান এমন ব্যক্তি, বেকার এবং স্থানীয় গরিব মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বেঁচে যাওয়া বেশ কিছু খাবার, যদিও এগুলো বাজারে বিক্রির মতো টাটকা নয়৷
টাফেলের এক স্বেচ্ছাসেবী গুন্টার গিজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, মাসের শেষে নিঃস্ব মানুষজন এসে জিজ্ঞাসা করছেন, আরও একটু বেশি খাবার পাওয়া সম্ভব কি না৷ বোঝাই যাচ্ছে, এই মূল্যবৃদ্ধি উদ্বেগজনক, যা কোনওভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়৷
কয়েক দশকের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি
বুধবারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৩.১ শতাংশ৷ এই মূল্যবৃদ্ধি ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে৷
বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে৷ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এর একটা বড় কারণ৷ মহামারির নিয়ন্ত্রণবিধি উঠে যাওয়ায় জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে৷ পাশাপাশি, ওপেক গোষ্ঠী ধীরে ধীরে মহামারির আবহের ক্ষতির দিকগুলো পুনরুদ্ধার করা শুরু করেছে৷
জ্বালানি ব্যবহারের বাড়তি খরচ, সামগ্রিক উত্পাদন ব্যয়কে বাড়িয়ে তুলছে৷ নির্মাতারা বলছেন, এটি প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্দিষ্ট করা কঠিন করে তুলেছে৷ মূল্যবৃদ্ধির জেরে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে, এদিকে ব্যবসায়ীরাও কূল পাচ্ছেন না৷
করাতের ব্লেড নির্মাতা সংস্থার এক কর্মকর্তা হেইনো বুডেনবার্গ বলেন, ‘‘১৯৫০ সাল পর্যন্ত বস্ত্রশিল্প জার্মানি বেশ উন্নত ছিল, ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ ব্যবসা এশিয়ায় চলে যায়৷ আমাদের শিল্পের ক্ষেত্রেও এমনটা হোক তা আমি চাই না৷''
অতীতের ক্ষত
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়া এবং তারপর ১৯২৩ সালে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির ফলে দৈনিক হারে অর্থ দেওয়া হত কর্মীদের৷ অর্থের মূল্য কমে যাওয়ার আগে গিয়ে জিনিসপত্র কিনে ফেলতে ছুটোছুটি করতে হত সেইসময়৷ এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সংকটে ভুগেছে জার্মানি৷
মার্কিন অর্থনীতিবিদ এবং নোবেলজয়ী রবার্ট শিলারের মতে, তাত্ত্বিক মূল্যবৃদ্ধির ভীতিও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগজনক৷ বিপদে পড়তে পারেন অনেকে৷
টাফেলের স্বেচ্ছাসেবী গিজা ডয়চে ভেলেকে জানান, ৮০ ইউরোর বদলে ১০০ ইউরো দিতে হচ্ছে গ্যাস স্টেশনে৷ দরিদ্র মানুষজন ভাবছেন, পাউরুটি কেনা লাভজনক হবে নাকি সেই টাকায় দুধ কিনবেন৷ সব জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছে৷
ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) উচ্চ সুদের হার দিয়ে মূল্যবৃদ্ধিকে সামলানোর ধারণায় বিশ্বাসী নয়৷ ইসিবির মতে, মহামারির ফলে সরবরাহের সমস্যাগুলির সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির যোগ রয়েছে, তবে এটি অস্থায়ী৷
প্রতিবেদন: ক্রিস্টি প্লাডসন/আরকেসি