জার্মানিতে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার আইন চালু হতে যাচ্ছে
২৮ অক্টোবর ২০২৪জার্মানির নতুন ‘সেল্ফ-ডিটারমিনেশন অ্যাক্ট' ব্যবহার করে শুক্রবার থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সিরা আনুষ্ঠানিক নথিতে থাকা নিজেদের নাম, লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন বা জেন্ডার মার্কার তুলেও দিতে পারবেন৷
এই পরিবর্তনের আবেদন করা এবং তা ব্যক্তিগতভাবে ঘোষণার মধ্যে তিনমাস অপেক্ষার একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তবে এই আইন চালুর শুরুর দিকে এধরনের পরিবর্তনের আগে দুইটি মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন এবং আদালতে শুনানির যে নিয়মের কথা বলা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে৷
১৪ বছরের বেশি বয়সি অপ্রাপ্তবয়স্করাও এই পরিবর্তন করতে পারবে তবে সেজন্য তাদের অভিভাবকের অনুমতি বা আইনি সহায়তা নিতে হবে৷ অভিভাবকরা শিশুদের পক্ষে পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন তবে শিশুদেরও সরকারি নিবন্ধন দপ্তরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং তাদের সম্মতি দিতে হবে৷
এই আইনের মাধ্যমে শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা যাবে৷ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব নেই৷
জার্মান ট্রান্স* অ্যাসোসিয়েশন (বিভিটি)-এর নীতি বিষয়ক কর্মকর্তা ক্যালে হ্যুম্ফনার নতুন এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন যে নিজের লিঙ্গ নিজেই সনাক্তের ব্যাপারটি এখন আরো সহজে এবং কম খরচে করা যাবে৷
হ্যুম্ফনার আরো একটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন৷ তাহচ্ছে নতুন আইনি প্রক্রিয়ার কারণে যারা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনে আগ্রহী তাদের আগের মতো বিব্রতকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না৷
তিনি বলেন, ‘‘আগের যাচাই প্রক্রিয়ায় অনেক একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যও ফাঁস করতে হতো আগ্রহী ব্যক্তিদের - এমন তথ্য যা আদালতকে জানাতে হতো৷ অনেক আতঙ্কজনক প্রতিবেদন রয়েছে যেখানে আগ্রহীরা জানিয়েছেন যে তাদেরকে নিজেদের যৌন পছন্দ, হস্তমৈথুন চর্চা এবং অন্তর্বাস বাছাইয়ের মতো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল৷''
জার্মান সংবাদসংস্থা ডিপিএর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির রাজধানী বার্লিনের বর্ধনশীল এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের ১২০০-র মতো মানুষ এখন অবধি আনুষ্ঠানিক নথিতে লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন৷ ক্যাথলিক সংবাদ সংস্থা কেএনএ জানিয়েছে যে অন্যান্য শহরেও একইরকম আগ্রহ রয়েছে৷
জার্মান সাংসদ এবং ট্রান্সজেন্ডার নারী ন্যুকে স্লাভিক সবুজ দলের পক্ষে আইনটি বাস্তবায়নের জন্য সমঝোতার দায়িত্বে ছিলেন৷ তিনি এই আইনের ভূয়সী প্রশংসা করে জানান যে এটির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে৷
স্লাভিক বলেন, ‘‘ডানপন্থি পপুলিস্ট কন্ঠগুলো যখন আবারও চড়া হচ্ছে তখন এই আইনের বাস্তবায়ন এক আশার প্রতীক৷ এবং এটা এমন এক সময় যখন অনেক দেশ ক্যুয়ার মানুষদের অধিকার ইস্যুতে পেছনের দিকে হাঁটায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷''
জার্মানির জোট সরকার নতুন এই আইনের প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করার পর সেটি বিরোধী দল রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী (সিডিইউ) এবং এটির বাভারিয়া অংশ খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন (সিএসইউর) বিরোধিতার মুখে পড়ে৷ উগ্রডানপন্থি পপুলিস্ট দল এএএফডিও খসড়াটির বিরোধিতা করে৷
সংসদে ব্যাপক বিতর্কের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পরিবর্তন এনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে আইনটি অনুমোদন করা হয়৷