1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে কি ঘুস আছে?

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
১৭ জানুয়ারি ২০১৮

যে দেশে মানুষ আছে, সে দেশে ঘুস থাকবেই, থাকবে দুর্নীতি৷ জার্মানিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ তবে এখানে ব্যক্তি পর্যায়ে ছোটখাট ঘুস নেওয়া কিংবা দেওয়ার রেওয়াজ বিশেষ নেই৷ মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভাণ্ডারের দেশ এটি৷

https://p.dw.com/p/2qnPo
Symbolbild Geldwäsche
ছবি: Fotolia/Carlson

জীবনের অর্ধেক কাটিয়েছি উপমহাদেশে, বাকি অর্ধেক জার্মানিতে৷ আজ যখন কেউ জিগ্যেস করেন, তফাৎটা কোথায়, তখন আমি বলি: ‘‘জানেন তো, জার্মানিতে ৩৫ বছর কাটালাম বিদেশি-বহিরাগত হিসেবে৷ কিন্তু আজ অবধি কোনো কাজের জন্য চেনাশোনা কোনো কর্তাব্যক্তিকে টেলিফোন করতে হয়নি – অর্থাৎ বলতে বা তাকে দিয়ে বলাতে হয়নি, তা সে টেলিফোন কনেকশানই হোক আর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোই হোক৷ আর ঘুস?''

জার্মানির কথা বলার আগে দেশের দু'টো অভিজ্ঞতার কথা বলি৷ বহু যুগ আগে যখন রাতের প্যাসেঞ্জারে থার্ড ক্লাস টু-টায়ার কম্পার্টমেন্টে রিজার্ভেশন ছাড়া চেপে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া যেতাম, তখন সরকারবাবু নামের এক গার্ড ট্রেন ছাড়বার পরে বাকি বার্থগুলো বিলি করতেন এই বলে: ‘পয়সা তো দিতেই হবে৷ তা কোন সরকারকে দেবেন? এই সরকারকে, না ভারত সরকারকে?' জার্মানিতে গার্ডরা প্রধানত সিট রিজার্ভেশন বিলি করে থাকেন৷ তবে সেজন্য কোনো গার্ড কখনো পয়সা নিয়েছেন বলে আজ পর্যন্ত শুনিনি৷

দ্বিতীয় কাহিনি, এটাও ট্রেনের৷ স্থানটা কলকাতা৷ দেশে গেছি, যাব কলকাতা থেকে দিল্লি৷ ছোটভাই রেলের অফিসার, সে-ই বলে দিয়েছিল, তাই অত কম সময়ের মধ্যেও যাহোক একটা রিজার্ভেশন পাওয়া যাচ্ছিল৷ বুকিং অফিসে গিয়ে ভাইয়ের নামধাম বললাম; কাউন্টারের ক্লার্কটি সঙ্গে সঙ্গে টিকিট করে দিলেন – সে আমলে ৯০ টাকার কিছু বেশি৷ একশ' টাকার নোট দিয়ে খুচরোর অপেক্ষায় আছি, দেখি ক্লার্ক ভদ্রলোক নড়াচড়া করেন না৷ আমতা আমতা করে বললাম: ‘বাকিটা?' করণিক মহোদয় অবাক হয়ে বললেন: ‘সেকি, পান খাওয়ার পয়সা দেবেন না?' আমাকে পাঠিয়েছে কিন্তু তার অফিসার৷

আমার থিওরি হলো যে, কর্মচারীদের যদি বেঁচে থাকার মতো সঠিক মাইনে না দেওয়া হয়, তবে তারা নিজেরাই কাস্টমারদের ওপর ঘুসের সারচার্জ বসিয়ে মাইনে বাড়িয়ে নেবে৷ জার্মানিতে মানুষজনের মাইনে এত বেশি যে, তাদের চুরি করার দরকার পড়ে না – থুড়ি, হাত পাতার দরকার পড়ে না৷ তার কারণ – আমার আরেক থিওরি – পৃথিবীতে আসলে চোর বলে কিছু নেই, আছে শুধু গরিব লোক৷ জার্মানিতে একজন বাস ড্রাইভারের মাইনে ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশের প্রফেসরদের সমান৷ কাজেই এ দেশের সাধারণ লোক ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করে না৷

এদেশে হয় পুকুর চুরি৷ জার্মানিতে ঘুস দেওয়া-নেওয়া আর দুর্নীতির খেলাটা খেলেন প্রাইভেট কোম্পানি আর রাজনীতিকরা – ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল৷ সে অনেক টাকার খেলা৷ অফিস থেকে প্রিন্টারের কাগজ নিয়ে যাওয়া, বা সরকারি কনট্র্যাক্টের উপর নির্ভরশীল কোনো কোম্পানিকে ডাকিয়ে নিখরচায় নিজের বাড়ির বাগানটা করিয়ে নেওয়া – অথবা কোনো ‘বন্ধু' কিংবা ‘শুভানুধ্যায়ী'-কে দিয়ে হোটেলের বিলটা দিইয়ে নেওয়া, জার্মানির এক সাবেক প্রেসিডেন্ট যা করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিলেন – এগুলোকে আমি চুরি না বলে ছ্যাঁচড়ামো বলি, যা সব দেশেই আছে৷

এ দেশে ঘুস বলতে মিলিয়ন্স, পিনাট্স নয় – অর্থাৎ কোটি কোটি টাকা এদিক থেকে ওদিক চলে যায়, যেন আকাশে এরোপ্লেন উড়ছে, মাটির মানুষ তা দেখতে পাচ্ছে না৷ জার্মান কোম্পানিগুলো যত না ঘুস খায়, তার চেয়ে বেশি ঘুস দেয় – বলে বাজারে তাদের দুর্নাম আছে, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা দক্ষিণ অ্যামেরিকায়৷ অন্যান্য হাতিমির বহুজাতিক কোম্পানির মতোই জার্মান কোম্পানিরাও পারলে প্রেসিডেন্ট কেনে, কেনে প্রাইম মিনিস্টার – কনট্র্যাক্ট চাই তো, না হলে কারখানার চাকা ঘুরবে কি করে?

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এদেশে আরেকটা খেলা হল, বড় বড় সরকারি প্রকল্প নির্মাণের সময় আর খরচ, দু'টোই বাড়তে থাকে চক্রবৃদ্ধি হারে৷ হামবুর্গের এলব ফিলহার্মনি, বার্লিনের বিইআর বিমানবন্দর, স্টুটগার্টের রেলওয়ে স্টেশন, কতো নাম করব৷ সর্বত্রই একই কাহিনি: গোড়ায় যা খরচ ধরা হয়, শেষমেষ তার পাঁচগুণ খরচ পড়ে, সময়ও লাগে অনেক বেশি৷ এক্ষেত্রে আমার থিওরি হলো, টাকা এদেশে বাতাসে উড়ছে, পঙ্গপালের মতো৷ সেই টাকা ধরে খাওয়ার জন্য পাবলিক প্রকল্প লাগে৷ পাবলিক প্রকল্পের দেখাশোনার দায়িত্বে আবার রাজনীতি, কাজেই রাজনীতিকেও তো কিছু ফড়িং ধরে দিতে হবে?

বলতে কি, এদেশে এত টাকা যে, ২০১৫ সাল যাবৎ শুধু ভাঙাচোরা স্কুলের জিম বা ফেলে রাখা সেনা ছাউনি সারিয়ে উদ্বাস্তু আবাস করেই অনেক ছোট থেকে মাঝারি কোম্পানি লাল হয়ে গিয়েছে৷ এদেশে প্রতিটি শহর বা পৌর এলাকাকে এক একজন উদ্বাস্তু নেওয়ার জন্য বছরে ১০,৪০০ ইউরো বরাদ্দ করা হয়৷ আহা, একাত্তরের যুদ্ধের পর দণ্ডকারণ্য পুনর্বাসনের সময় যদি এরকম একটা তহবিল থাকত৷

এক কথায়, চুরি করার জন্য গাঁয়ের মাঝখানে যদি একটা বেওয়ারিশ কিন্তু বারোয়ারি পুকুর থাকে, তবে মানুষজন পরস্পরের ঘটিবাটি চুরি করতে যাবে কোন দুঃখে?

 

জার্মানিতে ঘুস নিয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে? মন্তব্য করুন নিচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান