জার্মানির বিরুদ্ধে তুরস্কের ক্ষোভ
১ আগস্ট ২০১৬জার্মানিতে সমাবেশ
রোববার জার্মানির কোলন শহরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একটি সমাবেশ করেছে৷ তুরস্কের ক্রীড়ামন্ত্রী আকিফ কাগাতে জার্মান দৈনিক ‘টাগেসস্পিগেল'কে জানিয়েছেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে সবাইকে এই বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, সব দল, এনজিও এই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরছে৷ সমাবেশে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ জার্মানিতে অন্তত ৩০ লাখ তুর্কির বসবাস৷
সমাবেশের আগে, জার্মানির আদালত এর্দোয়ানসহ তুরস্কের যে-কোনো নেতার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ তবে এই সিদ্ধান্তে তুরস্কের প্রশাসন ক্ষোভ জানিয়েছে৷ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এ ঘটনাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে, মতামত প্রকাশে হস্তক্ষেপ বলে জানিয়েছেন৷
ভিসা-ফ্রি ভ্রমণ
তুরস্কের নাগরিকদের বিনা ভিসায় ইউরোপের দেশগুলো ভ্রমণের সুবিধা না দিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো শর্ত মানা হবে না বলে জানিয়েছে তুর্কি সরকার৷ সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চের চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্কের জনগণকে বিনা ভিসায় ইউরোপে প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার গুয়েন্থার ওয়েটিঙ্গার বলেছিলেন, অভ্যুত্থান চেষ্টার পর তুরস্কে সম্প্রতি যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তাতে তুরস্কের জনগণের বিনা ভিসায় ইউরোপ ভ্রমণ সীমিত করা উচিত৷
দমন-পীড়ন
অভ্যুত্থান চেষ্টার দিন এর্দোয়ান মারমারিসের যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন সেখানে ৩৭ জন সেনা কমান্ডো হামলায় অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি আনাদলু সংবাদ সংস্থা৷ এর মধ্যে ২৫ জনকে আগেই আটক করা হয়েছিল৷ এরপর সম্প্রতি আরও ১১ জনকে আটকের খবর দিয়েছে সংস্থাটি৷ বাকি একজন এখনও পলাতক আছেন৷
এদিকে, রবিবার ১,৩৮৯ জন সৈনিককে বহিষ্কার করে তাদের বিরুদ্ধে ডিক্রি জারি করা হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তুরস্কে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার জনকে আটক, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিচারকসহ শিক্ষকরাও রয়েছেন৷ বহিষ্কার হওয়া ৩,০০০ বিচারকের ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
এর আগে তুরস্ক শতাধিক জেনারেল ও অ্যাডমিরালসহ ১,৭০০'র বেশি সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছিল৷ তুরস্কের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য গুলেনকেই দায়ী করে আসছে আঙ্কারা৷
গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান মিলিটারি একাডেমিগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন৷ আগের সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিলে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতেন৷ এখন তাদের সঙ্গে উপ-প্রধানমন্ত্রী, বিচারমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্সিলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন৷
গত ১৫ জুলাই রাতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের আহ্বানে সরকার সমর্থকরা রাস্তায় নেমে ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়৷ ওই ঘটনায় ২৩৭ জন নিহত এবং দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়৷
এপিবি/জেডএইচ (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)