জার্মানি ছাড়ছেন মেধাবিরা
১৭ মার্চ ২০১৪এটা কোনো অজানা বিষয় নয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় দেশ৷ সেসব দেশে সুযোগ-সুবিধা ও ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা চমত্কার, বেতন ভাল৷ এছাড়া সব কিছুই মানানসই৷ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কম৷
‘ব্রেইন ড্রেইন' হচ্ছে
অনেক গবেষক বিদেশে চলে যাওয়ার ফলে এক ধরনের ‘ব্রেইন ড্রেইন' দেখা দিচ্ছে জার্মানিতে৷ গবেষণার জন্য কিছুদিন অন্যদেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু অনেকেই তারপর আর ফিরে আসেন না৷
গত ২০ বছরে জার্মান নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে বিশেষ করে অ্যামেরিকার হার্ভার্ড, ইয়েল, স্ট্যানফোর্ড কিংবা কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিতে কাজ করছেন৷ এশিয়া ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার শীর্ষ গবেষকরা শুধু ভাষায় কারণেই জার্মানির চেয়ে ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলিকে প্রাধান্য দেন৷
জার্মানিতে আসছেন কম
ইএফআই-এর নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে : জার্মানির সেরা গবেষকদের অনেকেই দেশ ছাড়ছেন, কিন্তু জার্মানিতে আসছেন সেই তুলনায় কম৷
বিষয়টি নতুন নয়, কিন্তু একেবারে সঠিকও নয়৷ ইএফআই-এর তথ্যমতে ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার গবেষক জার্মানি ছাড়েন, জার্মানিতে আসেন ১৯,০০০৷
সংখ্যাটা সঠিক হলেও হালনাগাদ করা হয়নি বলেন ‘হেল্মহল্জ অ্যাসোসিয়েশন অফ জার্মান রিসার্চ সেন্টার'-এর প্রেসিডেন্ট ইউর্গেন মিনেক৷ তাঁর মতে, গত ১০ বছরে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এক্ষেত্রে শক্ত একটা ভিত তৈরি করেছে৷ গবেষণার অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে তারা৷
আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ
গত বছরগুলিতে জার্মানিকে দেশি-বিদেশি গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
১১টি ইউনিভার্সিটিকে এলিট ইউনিভার্সিটি আখ্যা দেওয়া হয়েছে৷ এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য মিলিয়ন অঙ্কের অতিরিক্ত আর্থিক অনুদান নির্ধারণ করা হয়েছে৷ যাতে তারা বিজ্ঞান ও গবেষণা ক্ষেত্রে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে৷ এ সব কিছুই সেরা গবেষকদের বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উৎসাহিত করবে৷
জার্মানির শিক্ষা গবেষণা মন্ত্রী ইওহানা ভাংকা বলেন, এই সব উদ্যোগের ফলে দেখা যাচ্ছে জার্মানি সারা বিশ্বের গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে৷ এমনকি নোবেল প্রাইজ বিজয়ীরাও ফিরে আসার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন৷ যেমন ২০১৩ সালে চিকিৎসায় নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী টোমাস স্যুডহোফ স্বাস্থ্য গবেষণা ইন্সটিটিউটে গবেষণা করার জন্য বার্লিনে আসবেন বলে জানিয়েছেন৷ এতদিন কালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কাজ করেছেন তিনি৷
অনেক কিছু করতে হবে
তবুও এক্ষেত্রে আরো অনেক কিছু করতে হবে৷ গবেষণা ও শিক্ষায় আরো বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও এবং কয়েকটি ইউনিভার্সিটিকে ‘এলিট উনি' আখ্যা দেওয়া হলেও শিক্ষাঙ্গনের সেরা ব্যক্তিরা অ্যামেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড এমনকি ডেনমার্কেও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ সেসব দেশে ইংরেজি ভাষা চলে৷ জার্মানিতে কোনো কোনো বিষয়ে ইংরেজির প্রচলন মাত্র শুরু হয়েছে৷ এছাড়া গবেষক ও বিজ্ঞানীদের জন্য চাকরির চুক্তি প্রায় ক্ষেত্রেই তেমন আকর্ষণীয় নয় এখানে৷
ছয় মাসের চুক্তি নিয়ে কোনো গবেষক কি পরিবার নিয়ে হাইডেলব্যার্গ কিংবা হামবুর্গে আসতে আগ্রহী হবেন? এক্ষেত্রে যে আরো অনেক কিছু করার আছে৷ পাঁচ বছর পর হয়ত কিছুটা উন্নতি হবে৷ এমনই ধারণা ইএফআই-এর৷