জার্মান সেনাবাহিনীতে ডানপন্থি চেতনা
৪ মে ২০১৭টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের গোথায় জার্মান সেনাদের সঙ্গে মাত্র কয়েকদিন কাটিয়েছিলেন আন্দ্রে ই৷ সেখানে তিনি তার সুপারভাইজারকে সরাসরি বলেছিলেন, ‘‘আমি নিজেকে জাতীয় সমাজবাদী হিসেবে পরিচয় দিতে চাই৷’’ তবে তাকে দেখে যে কেউ সেটা বুঝতে পারতো, কেননা, তার শরীরে একটা ট্যাটু ছিল, যেটার বক্তব্য মূলত হিটলারের ‘ব্লাড অ্যান্ড অনার’৷ সে প্রকাশ্যে বলে বেড়াতো এসএস-এর প্রতি সে অনুরক্ত৷ সেখানে আরও ১০ মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছিল আন্দ্রে, শিখেছিল কীভাবে রাইফেল চালাতে হয় এবং হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়তে হয়৷ এটা আজ থেকে ১৭ বছর আগের ঘটনা৷ আন্দ্রে কেবল একজন নব্য নাৎসিই নয়, সে ডানপন্থি জঙ্গি দল ‘ন্যাশনাল স্যোশালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড’ বা এনএসইউ-এর সদস্য, যাদের বিরুদ্ধে মিউনিখে এখনও বিচার চলছে৷ তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা এবং ১০ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে৷ প্রশ্ন হলো, জার্মান সেনাবাহিনী কেন তাদের বিরুদ্ধে শুরুতেই ব্যবস্থা নেয়নি?
২০১২ সালে রক্ষণশীল দলের মিশায়েল এলকে আফগানিস্তানের কুন্দুজে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল৷ এর আগে ২০০৮ সালে কাসেল শহরে কট্টর ডানপন্থি দল এনপিডি'র সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিল৷ তিনি জাতীয়তাবাদী দল ‘ফ্রি রেজিসট্যান্স কাসেল’-এর সদস্য ছিলেন৷ ঐ রাজ্যটি বরাবরই নিও নাৎসিদের এলাকা হিসেবে পরিচিত৷ এরপরও তাকে আফগানিস্তানে কাজে পাঠানো হয়েছিল৷ জার্মান সেনাবাহিনী কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি?
ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার দীর্ঘদিনের ইতিহাস
১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জার্মান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি সংকটে রয়েছে৷ সেই সময় সেনাবাহিনী আসলে ছিল ডানপন্থি জঙ্গিদের স্বর্গ, কেননা, ৫০-এর দশকের শেষ ভাগে সেনাবাহিনী হিটলারের এলিট ফাইটিং ফোর্স ভাফেন-এসএস-এর ৩০০ কর্মকর্তাকে ভাড়া করে৷ এছাড়া হিটলার বাহিনীর ১২ হাজার সদস্য, এমনকি ৪০ জন নাৎসি জেনারেলও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিল৷ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ফ্রানৎস-ইয়োসেফ স্ট্রাওস৷ তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সেনা ব্যারাকগুলোর নাম রাখা হয়েছিল নাৎসি জেনারেলদের নামে৷ সেই জেনারেলরা হিটলারের হত্যা পরিকল্পনায় বাধা দিয়েছিলেন এবং বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন৷
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানেও জার্মান সেনাবাহিনীতে যে কোনো পরিবর্তন আসেনি তা লেফটেন্যান্ট ফ্রাংকো এ'র সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা আবারও প্রমাণ করেছে৷ ঘটনাগুলো তখনই প্রকট হয় যখন কোথাও স্বস্তিকা চিহ্নের গ্রাফিটি চোখে পড়ে৷ বলা হচ্ছে, এই নিও নাৎসিদের মনোভাব সেনাবাহিনীর ১৮ থেকে ২৫ বয়সি তরুণদের মধ্যে বেশি প্রকট৷ কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এদের চিহ্নিত করা হলেও সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে না৷ নিয়ম অনুযায়ী, আদালতে আগে তাদের বিরুদ্ধে যথার্থ প্রমাণ হাজির করতে হবে যে তারা কট্টর ডানপন্থি দলের সদস্য, তারপরই তাদের অপসারন সম্ভব৷
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অবস্থান
ফ্রাংকোর মতো উচ্চপদস্থ অফিসারের উগ্র দক্ষিণপন্থি ভাবধারা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও বাহিনীর সতীর্থ ও কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে থেকে যে ‘ভুল’ সংহতির পরিচয় দিয়েছেন, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর স্থগিত করেছেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ আজ বার্লিনে তদন্ত নিয়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তাঁর৷
ম্যার্কেলের সমর্থন
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েনকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন৷ ম্যার্কেলের মুখপাত্র বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘জার্মান সেনাবাহিনীতে এমন একজন ডানপন্থি সদস্য থাকতে পারে এটা সেনাবাহিনীর জানা উচিত ছিল এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যে প্রশ্নটি তুলেছেন তা যৌক্তিক এবং চ্যান্সেলর তাঁকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছেন৷’’
ফলকের ভাগেনের/এপিবি