জার্মান মানবাধিকার পুরস্কার পেলেন পুটিনের সমালোচক
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪২০২২ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর সপরিবারে দেশ ছাড়েন সেরগেই৷ দীর্ঘ দিন দেশে পুটিনের সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি৷
মস্কোয় থাকাকালীন লুকাশেভস্কি একটানা ১৪ বছর মস্কোর সাখারভ সেন্টারের প্রধান ছিলেন তিনি৷ এই শাখারভ সেন্টার রাশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত মানবাধিকার সংগঠন৷
সোভিয়েত আমলের নাগরিক অধিকার কর্মী আন্দ্রেই শাখারভের নামে এই সংগঠনের নাম৷ দীর্ঘ দিন ধরে এই সংগঠনটি বর্তমান রুশ নেতৃত্বের সমালোচনা করে৷ ২০১২ সালে পুটিন সরকার তাদের ‘বিদেশি এজেন্ট' ঘোষণা করলে ২০২৩ সালে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় সংগঠনটির কাজ৷
মুক্ত রাশিয়ার জন্য ‘রেডিও সাখারভ'
হাজার হাজার রাশিয়ান বুদ্ধিজীবীদের মতোই, সেরগেই এখন বার্লিনের বাসিন্দা৷ ৪৮ বছর বয়সি এই ইতিহাসবিদ বলেন, ‘‘২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম কয়েক মাস আমরা থ মেরে যাই৷''
কিন্তু তারপর ঘুরে দাঁড়ান তিনি৷ গবেষণা সংস্থা কারেক্টিভের সহায়তায় সহকারীদের সাথে মিলে নির্বাসনেই শুরু করেন রেডিও শাখারভ, একটি রেডিও ও পডকাস্ট মাধ্যম৷ মূল শাখারভ সেন্টারের আদর্শে গড়া এই রেডিও শাখারভকে সেরগেই চান বৈশ্বিক তথ্য আদানপ্রদানের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম করে তোলা, যা পুটিন-পরবর্তী রাশিয়াকে নতুন করে গড়তে সাহায্য করবে৷
তার এই কাজের প্রতি সম্মান হিসাবেই তিনি পেলেন ২০২৪ সালের মানবাধিকার পুরস্কার৷ পুরস্কার দেওয়া হয় ২৮ জানুয়ারি ড্যুসেলডর্ফে৷
দশ হাজার ইউরো অর্থ মূল্যের এই পুরস্কার চালু করেন হাঙ্গেরিতে জন্মানো সংগীত পরিচালক অ্যাডাম ফিশার, যিনি নিজের জীবনেও স্বৈরাচারকে কাছ থেকে দেখেছেন৷ ফিশারের পূর্ব প্রজন্ম হলোকস্টে মারা যান৷
পুরস্কার দানের মুহূর্তে ফিশার বলেন, ‘‘বর্তমান বিশ্বে যেভাবে যুদ্ধ ও সংঘর্ষ চলছে, তা সে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন হোক, বা হামাসের ইসরায়েল হামলার পর গাজায় চরম সহিংসতা, সেই পরিস্থিতিতে মানবাধিকারকে শুধু রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে চলবে না৷ যদিও নিরপেক্ষ থাকা কঠিন, তাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে মানবাধিকারই শেষ কথা৷''
পুরস্কারের পর...
লুকাশেভস্কি ও তার সহকর্মীদের জন্য, এই পুরস্কারের মূল্য অনেক৷ জার্মান সমাজে যে সমর্থন রয়েছে, তার সাহায্যে রাশিয়ার গণতন্ত্রপন্থি কন্ঠকেও আজ চিনতে পারছে বিশ্ব৷
লুকাশেভস্কি বলেন, ‘‘পশ্চিম ইউরোপের টিকে থাকার জন্যেও এই উপলব্ধি খুব গুরুত্বপূর্ণ৷'' তিনি নিশ্চিত, পুটিনের শাসন আর খুব বেশি দিন চলবে না৷ ‘‘এই সরকারের পতন হবেই৷ আমরা জানিনা তা ঠিক কখন হবে, কিন্তু সেটা হবেই'', মত সের্গেইয়ের৷
একজন ইতিহাসবিদ হিসাবে তিনি ভাবিত পুটিন-পরবর্তী রাশিয়া নিয়ে৷ কেমন হবে সেই দেশ?
সের্গেইয়ের মতে, রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী অনেকেই, এবং সবাই নীরব নন, তার মতো সমালোচকও আছেন৷ রাশিয়ার সাথে ইউরোপের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ায় যাই হোক না কেন, রাশিয়াও ইউরোপের অংশ৷ পশ্চিমা দেশগুলির এটাও জানা উচিত যে রাশিয়া মানেই শুধু পুটিন ও তার ঘনিষ্ঠ মহল নয়, এবং এটা রাশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য অর্থবহ৷''
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় টিভি চ্যানেলের একটি সমীক্ষা বলছে, রাশিয়ার ১২ শতাংশ মানুষ ইউক্রেনের যে যুদ্ধকে পুটিন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান' বলছেন, তাকে সমর্থন করেননা৷
লুকামেভস্কি বলেন, ‘‘১৪ কোটির জনসংখ্যার দেশে এমন সাহসী মানুষদের সংখ্যা কয়েক লাখ৷'' তার এই পুরস্কার একই সাথে মুক্তভাবে নিজের কথা বলতে চেয়ে জীবন দেওয়া মানুষদেরও, বলেন তিনি৷