মার্কিন অর্থানুকূল্য
১ ডিসেম্বর ২০১৩ছোট্ট, হলদে রঙের একটি জীব৷ মরুভূমির এই পঙ্গপালটির একটি বিশেষ দর্শনেন্দ্রিয় আছে, যার সাহায্যে সে অন্ধকার রাত্রে কিংবা প্রখর দিবালোকে তার পথ খুঁজে নিতে পারে, হাজার হাজার কিলোমিটার ধরে৷ দৃশ্যত এই পঙ্গপালরা আকাশের তারা অথবা চাঁদের আলো দেখে পথ চলতে পারে৷ এটা কি বিমানযাত্রার ক্ষেত্রেও দিকনির্ণয়ের আদর্শ হতে পারে না? মারবুর্গের ফিলিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ঠিক সেই সম্ভাবনা নিয়েই গবেষণা করছেন৷
জার্মানির সরকারি এনডিআর টেলিভিশন সংস্থা এবং বেসরকারি স্যুডডয়চে সাইটুং পত্রিকার একদল রিপোর্টার অনুসন্ধান করে বার করেন যে, বহু জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থে গবেষণা করা হয়ে থাকে৷ মারবুর্গের বিজ্ঞানীরাও আফ্রিকার পঙ্গপাল নিয়ে তাদের গবেষণায় মার্কিন বিমানবাহিনীর কাছ থেকে ৭০ হাজার ডলার সাহায্য পেয়েছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের গবেষণাকে বুনিয়াদী গবেষণা বলেই গণ্য এবং চিহ্নিত করে থাকেন৷
আরো খোঁজখবর করে সাংবাদিকরা জানতে পারেন যে, পঙ্গপাল সংক্রান্ত ‘বুনিয়াদী গবেষণা'-র উদ্দেশ্য ছিল, পঙ্গপালদের বিশেষ ‘দৃষ্টিশক্তি' ড্রোন এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা চলে কিনা, তা নির্ধারণ করা৷ এবং পেন্টাগনের হয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে দৃশ্যত মারবুর্গ একা নয়৷ প্রায় ২২টি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান অতীতে বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় মার্কিন বদান্যতার স্বাদ পেয়েছে৷ সমরাস্ত্র সংক্রান্ত এবং বুনিয়াদী গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জার্মানিতে প্রায় এক কোটি ডলারের আদানপ্রদান ঘটেছে৷
২০১২ সালে মিউনিখের লুডভিশ-ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার পেয়েছে৷ ফ্রাউনহোফার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য বুলেটপ্রুফ কাচ এবং নানা ধরনের বিস্ফোরক নিয়ে গবেষণা করছে৷ মজার কথা, মার্কিন অর্থে যে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান গবেষণা করছে, তাদের অনেকের সনদেই কিন্তু লেখা আছে যে, এখানে সামরিক উদ্দেশ্যে গবেষণা করা চলবে না৷
বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জানাচ্ছে যে, তারা হয় বুনিয়াদী গবেষণা, নয়তো ‘ডুয়াল-ইউজ' বা দ্বিবিধ ব্যবহারের গবেষণা চালাচ্ছে, যে ধরনের গবেষণার ফলাফল সামরিক অথবা বেসামরিক, উভয়ভাবেই ব্যবহার করা চলতে পারে৷ এছাড়া স্বয়ং জার্মান সামরিক বাহিনী জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার জন্য অর্থপ্রদান করে থাকে৷
এক্ষেত্রে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নির্দ্দিষ্ট করে কিছু বলতে নারাজ৷