হরতালে রাজধানী জুড়ে যানজট
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সময় বৃহস্পতিবরাই ছিল প্রথম সারা দেশে হরতাল৷ চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ডের প্রতিবাদে জামায়াত এই হরতাল ডাকে৷
কিন্তু বৃহস্পতিবারের হরতালে সাড়া পায়নি জামায়াত৷ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ যানবাহন চলাচল করেছে৷ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে৷ আর সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতে কাজকর্ম হয়েছে যথারীতি৷ রাজধানীতে যারা হরতালে রাস্তা-ঘাট ফাঁকা দেখতে পাবেন বলে রাস্তায় বের হয়েছেন, তারা হতাশ হয়েছেন৷ উলটে তারা দেখতে পেয়েছেন চির পরিচিত যানজট৷
রাজধানীর ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ি, ফকিরাপুল, মতিঝিলসহ নানা এলাকা ঘুরে হরতালের কোনো আমেজ পাওয়া যায়নি৷ সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোর ব্যস্ততা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতই৷ ট্রাফিক পুলিশকেও দেখা যায় ব্যস্ত থাকতে৷ ফার্মগেটে যানজটের একটুও কমতি ছিলনা৷ ট্রাফিক কনস্টবল হায়দার আলি জানান, আগের হরতালে তাদের ব্যস্ততা কম থাকত৷ কারণ রাস্তাঘাটে যানবাহন থাকত কম৷ কিন্তু এবার তা নয়৷ স্বাভাবিক দিনের মতই তাকে গাড়ি ও পথচারীদেরও সামলাতে হচ্ছে৷ গণপরিবহন ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটর সাইকেল, অটোরিকশা এবং রিকশাও চলেছে রাজধানীতে যথারীতি৷
ঢাকার দোকানপাট এবং বিপণী বিতানগুলোও হরতালে ব্যস্ত সময় কাটায়৷ ক্রেতাদেরও কমতি ছিলনা৷ ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের দোকান কর্মচারী আরিফ হোসেন জানান, তাঁরা স্বাভাবিক দিনে মতই সকালে দোকান খুলেছেন৷ আর ক্রেতারাও আসছেন৷ একজন ক্রেতা হাসিবুর রহমান বলেন, হরতালের কোনো প্রভাব নেই৷ তিনি বাসা থেকে নিরাপদেই কেনাকাটা করতে এসেছেন৷
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েতুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, সকালে ঢাকা থেকে দূর পাল্লার বাস-মিনিবাস কম চললেও সকাল ১০টার পর থেকে সব রুটে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস চলাচল শুরু হয়৷ ঢাকার বাইরে থেকেও বাস-মিনিবাস ছেড়ে আসে ঢাকার পথে৷ তিনি আরও জানান, তাঁরা হরতালে যানবাহন আর বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কারণ এমনিতেই তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে৷ আর ক্ষতির মুখোমুখি হতে চাননা তাঁরা৷ এদিকে ঢাকার সঙ্গে দেশের সব অঞ্চলের রেল ও নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে৷ কাজ হয়েছে চট্টগ্রাম এবং মংলাসহ সব বন্দরে৷
হরতালের আগে ২ দিন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিরপুর এবং ধানমন্ডিতে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলেও হরতালের দিন বৃহস্পতিবার তাদের মাঠে দেখা যায়নি৷ পিকেটিং বা মিছিল দেখতে পাওয়া যায়নি৷ শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ বিভাগীয় শহরে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে৷ তবে বগুড়া এবং রাজশাহীতে হরতালের সমর্থনে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়ছে৷
এ ব্যাপারে কথা বলতে জামায়াত-শিবিরের কোনো শীর্ষ নেতাকে পাওয়া যায়নি৷ তবে মাঠ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, তারা আন্দোলন নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করছেন৷ আর জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা কারাগারে থাকায় দল চলছে একরকম নির্দেশনা ছাড়া৷ যে সব এলাকায় প্রভাব আছে, সেখানে নেতা-কর্মীরা সক্রিয় আছেন বলে জানান তারা৷
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, জামায়াতের ডাকা হরতাল দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তারা নাশকতার মাধ্যমে এতদিন জনগণকে জিম্মি করে রেখেছিল৷