‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে'
৭ অক্টোবর ২০১৬জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে তারা নাকি চরমপন্থা অবলম্বন করতে পারে এবং এতে জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন পাঠক ‘সূর্য শিশির'৷ তাঁর মতে, জামায়াতকে স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া উচিত৷ তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি তাদেরকে যখন শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ বা মিছিল মিটিং করতে দেওয়া হয় তখন তারা কিন্তু পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়৷ আর যখন তাদের উপর বল প্রয়োগ করা হয় তখন তাদের সহিংসতা বৃদ্ধি পায়৷ অতএব তাদেরকে গনতান্ত্রিক স্পেস দেওয়া উচিত৷''
অনেকটা একই রকম মত সোলায়মান সুমনের৷ তাঁর ধারণা, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বাড়বে৷ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড চলে যাবে৷ সেখান থেকেই অন্য সন্ত্রাসীদের মদদ দেবে এবং নিজেরাও একই কাজে নিয়োজিত হবে৷ ফলস্রুতিতে সন্ত্রাস বাড়বে, বাড়তেই থাকবে৷''
তবে খান রাহাত মনে করেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে না৷ এ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য এরকম, ‘‘আর যা-ই হোক আত্নগোপনে যাবে না, কারণ যারা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড' দল, তাঁদের অর্থের জোগানো হয় ‘আন্ডারগ্রাউন্ড' থেকেই৷ কিন্তু জামায়াত তাঁদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক-বীমা-ব্যবসা-বানিজ্য ছেড়ে ছুঁড়ে আত্নগোপনে চাইলেও যেতে পারবে না৷ ওরাও মানুষ ওদেরও ঘর-সংসার-বউ-বাচ্চা-মা-বাবা আছে, সেজন্যে জামায়াতের মতো ব্যবসায়িক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলে তাঁরা আত্নগোপনে যাবে এইটা অমুলক ভাবনা৷ তাহলে ওরা নিশ্চিতভাবেই তাঁদের সবচেয়ে কাছের ‘প্রিয় পাত্র' বিএনপির কাঁধেই ‘ভর' করবে এবং শিক্ষা ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে জামায়াতিরা বিএনপির চেয়ে অনেক দক্ষ৷''
আর জামায়াত সম্পর্কে পাঠক সালেক মোহাম্মদ লিখেছেন, ‘‘হাইকোর্ট জামাতকে সন্ত্রাসী দল বলেছে৷ জামাতকে তৈরি করার জন্য ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান একজন পুলিশ অর্থ ও সম্পদ দিয়েছিল৷ বর্তমানে জামাতের শক্তির উৎস হলো পাকিস্তান, যার পিছনে মদতদাতা সৌদি আরব, ব্রিটেন ও আমেরিকার মতো বিশ্ব শক্তি৷ সুতরাং হাসিনা ও তাঁর প্রভু ভারতের পক্ষে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ও ধ্বংস করা খুব সহজেই সম্ভব না বলেই আমি মনে করি৷''
অন্যদিকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে সন্ত্রাস কেন বাড়বে তা বোঝাতে গিয়ে আহসান হাবিব বলছেন, ‘‘ অবশ্যই বাড়বে, কারণ, একটা মতবাদকে যখন জনগণের বিশাল একটা অংশ গ্রহণ করে নেয়, তখন সেটা গায়ের জোরে নিষিদ্ধ করতে গেলে তারা সন্ত্রাসের পথে পা বাড়াতে পারে৷ গনতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো বিভিন্ন মতাদর্শের সহাবস্থান, সংঘাত নয়৷''
তবে বিপরিত মত পোষণ করেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আকাশ ইকবাল৷ তিনি মনে করেন জামায়াত নিষিদ্ধ হলে ভালোই হবে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘জামায়াত নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বাড়বে না, বরং কমবে, সেটা আমি মনে করি৷ জামায়াত জঙ্গিবাদীদের উৎসাহ দিচ্ছে তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে৷ বর্তমানে জামায়াত কিংবা ছাত্র শিবিরের অনেকেই জঙ্গিবাদে জড়িত হচ্ছে৷ তাছাড়া এই পর্যন্ত যত জন জঙ্গি ধরা পড়েছে তাদের অনেকের সাথে জামায়াতের সাথে সোগাযোগ রয়েছে৷''
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আকাশ ইকবাল লিখেছেন, ‘‘জামায়াতকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে, কারণ, জামায়াত দেশের শত্রু, তারা সব সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে, মুক্তি যুদ্ধের বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে৷''
জামায়াত বা শিবির নিষিদ্ধ হলে কিন্তু পাঠক মাহফুজ রহমানের কোনো আপত্তি নেই, বরং তিনি চান পাশাপাশি ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করা হোক৷
ভিন্ন কথা জানাচ্ছেন কাজি মানিক৷তাঁর মতে, বাংলাদেশ যা কিছুই ঘটে, তার সবই নাকি বাইরের অর্থাৎ বিদেশের ইশারায় ঘটে৷
আর এম এ হাসান যেন একেবারে নিশ্চিত হয়ে বলছেন, ‘‘জামায়াত বাংলাদেশে বিলীন হয়ে গেছে ৷বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিকে ঘৃনা করে৷''
আর খুব জোর দিয়ে ফেসবুকে মো. ইসরাফিল লিখেছেন, ‘‘জামায়াত ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল নয়৷ এদেশে গণতন্ত্র যাহা আছে তাহা জামায়াতেই আছে৷ তাই জামায়াতের উপর আরো যত অত্যচার আর নির্যাতনই করা হউক না কেন, যেই নামই দেওয়া হোক না কেন,এই ধরনের একটি দল কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে৷'' এক্ষেত্রে তিনি মিশর, তুরুস্ক, তিউনিসিয়ার উদাহরণ দিয়েছেন৷
‘‘নিষিদ্ধ করলে কিছুই হবেনা, জামায়াত আবার নতুন নামে আসবে৷'' ডয়চে ভেলের ফেসবুকে এই মন্তব্য পাঠক জাকিরের৷
তবে ডয়চে ভেলের পুরনো বন্ধু এসএমএ হান্নান মনে করেন, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জঙ্গিবাদ বাড়বেনা, তবে বিএনপির দল ভারি ও শক্তিশালী হবে৷
আর মাহবুব খান, মো.রানা, বিলাল আহমেদ, রাজা, মাসুম, রায়হান, নয়ন স্যাম, সবুজ সিরাজ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন পাঠকের দৃঢ় বিশ্বাস যে জামায়তকে নিষিদ্ধ করা যাবেনা৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী