জাদুকর মেসি
আর্জেন্টাইন প্লেমেকার লিওনেল মেসি এবারো পেলেন ইউরোপের সোনালি জুতো৷ এ নিয়ে রেকর্ড পাঁচবার এ পুরস্কার পেলেন তিনি৷ চলুন এক ঝলক উঁকি দিয়ে আসি এই মায়েস্ত্রো’র যাপিত জীবনে৷
জন্ম
লিওনেল আন্দ্রেয়াস মেসি’র জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরের বন্দর শহর রোজারিওতে৷ স্টিল ফ্যাক্টরি ম্যানেজার ইয়র্গে মেসি ও চুম্বক কারখানায় কাজ করা সেলিয়া কুচিত্তিনি’র চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি৷ বাবার পূর্বপুরুষরা ইটালি ও স্পেনের কাটালুনিয়ার বাসিন্দা৷ মায়ের পূর্বপুরুষরা ইটালিয়ান৷
নানী’র প্রভাব
ফুটবলপ্রিয় পরিবার ছিল মেসির৷ ছোটবেলায় দুই সহোদর রডরিগো ও মাটিয়াস এবং কাজিন ম্যাক্সিমিলিয়ানো ও এমানুয়েলের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন মেসি৷ চার বছর বয়সে যোগ দেন স্থানীয় ক্লাব গ্রান্ডোলিতে৷ তাঁর শিশুবেলার ফুটবলীয় জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ছিল নানী সেলিয়া’র৷ তিনি ক্ষুদে মেসিকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন অনুশীলনে বা ম্যাচ খেলতে৷ মেসির বয়স যখন ১১, তখন তিনি মারা যান৷ তখন থেকে গোল দিয়ে ওপরে তাকান মেসি, স্মরণ করেন তাঁকে৷
হরমোন সমস্যা
চমকপ্রদ নৈপুণ্যে গোলের বন্যা বইয়ে ছোটবেলাতেই জাত চিনিয়েছেন মেসি৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ১০ বছর বয়সে ধরা পড়ে যে তিনি বেড়ে ওঠার হরমোন সংকটে ভুগছেন৷ এর চিকিৎসার খরচ অনেক৷ তখন তিনি রোজারিওর ক্লাব নেওয়েলে খেলছেন৷ বুয়েনস আইরেসের ক্লাব রিভার প্লেট প্রথমে আগ্রহ দেখালেও পরে পিছু হটে৷ শেষ পর্যন্ত স্পেনের বার্সেলোনায় ট্রায়াল দিয়ে সেখানে যোগ দেন তিনি৷ বার্সাই দায়িত্ব নেয় তাঁর চিকিৎসার৷
মেসির জাদু
বার্সেলোনায় মেসির যাত্রা স্বপ্নের মতো৷ বয়সভিত্তিক দলগুলোতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁকে সুযোগ করে দেয় বড়দের সঙ্গে খেলার৷ একবার বড়দের এক ট্রেনিং সেশনে তাঁর খেলা দেখে সে সময়কার সেরা বার্সা তারকা ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকার রোনালদিনিয়ো সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘‘দেখো, ও আমার চেয়েও বড় খেলোয়াড় হবে৷’’ পরে মেসিকে বন্ধুই বানিয়ে নেন রোনালদিনিয়ো৷
বার্সার মূল দলে
১৩ বছর বয়সে বার্সায় যোগ দেয়া মেসি সিনিয়র টিমের জন্য চুক্তি সই করেন তাঁর ১৮তম জন্মদিনে৷ ফাবিও কাপেলোর ইউভেন্টুসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় তাঁর পথচলা৷ তাঁর খেলা দেখে কাপেলোই ভাগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন মেসিকে৷ কিন্তু মেসি পিঠ দেখাননি বার্সাকে৷ থেকে গিয়েছেন৷ একই বছর আগস্টে ডাক পান আর্জেন্টিনার জাতীয় দলেও৷
ঈশ্বরের দ্বিতীয় হাত
প্রায়ই মেসিকে মারাদোনার সঙ্গে তুলনা করা হতো৷ তিনিও তা জানতেন৷ আর তাই দিয়োগো মারাদোনার দুই আলোচিত গোলকে অনুকরণ করে মেসিও কোপা ডেল রে’র ম্যাচে গেটাফের বিপক্ষে ৬৬ গজ দৌঁড়ে পাঁচ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোণাকুণি শটে গোল করেন৷ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লা লিগা’র ম্যাচে এসপানিওলের বিপক্ষে মারাদোনার মতোই ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল করেন৷
মেসিয়াহ
রোনালদিনিয়ো ফর্ম হারাবার পর ২০ বছর বয়সি মেসিই হন কাটালানদের কাণ্ডারি৷ স্প্যানিশ মিডিয়া তাঁকে ‘মেসিয়াহ’ বলে ডাকা শুরু করে৷ বার্সার পক্ষে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি দলকে শুধু স্পেনসেরাই নয়, ইউরোপসেরাও বানান৷
আর্জেন্টিনায় নিষ্প্রভ
ক্লাবের পক্ষে যতটা উজ্জ্বল মেসি, জাতীয় দলের পক্ষে ততটাই নিষ্প্রভ, এমনটা বলেন নিন্দুকেরা৷ একটা বিশ্বকাপ শিরোপা অধরাই রয়ে গেছে এখনো৷ ২০১৪ সালে কাছাকাছি গিয়েও জার্মানির কাছে হোঁচট খেয়েছেন ফাইনালে৷ এমনকি কোপা অ্যামেরিকাও জিততে পারেননি তিনি৷ তবে ২০০৮-এ অলিম্পিক স্বর্ণজেতা দলেও ছিলেন৷
ব্যক্তিগত অর্জন
তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন অনেক বেশি৷ বলে শেষ করা যাবে না৷ ফিফা বালোঁ দ্য অঁর-এর ছয়বারের চারবারই জিতেছেন তিনি৷ বর্ষসেরা হয়েছেন ২০০৯ সালে৷ সে বছরই পেয়েছেন ইউরোপের বালোঁ দ্য অঁর পুরস্কার৷ ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন শ্যু জিতেছেন রেকর্ড পাঁচবার৷ ২০১৪ বিশ্বকাপেও গোল্ডেন বল জিতেছিলেন তিনি৷
ব্যক্তিগত জীবন
২০১৭ সালে প্রেমিকা অ্যান্থোনেলা ওকুৎজোকে বিয়ে করেন৷ তাঁদের তিন পুত্রসন্তানও আছে - থিয়াগো, ম্যাটিও ও চিরো৷