1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাক২৯ জুন ২০১৫

২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৫৩ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবেন সরাসরি, জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক৷ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পানি, মাটি ও ফসলের ওপর৷ উপকূলীয় মানুষ হারাবেন বাসস্থান, বাড়বে পানীয় জলের সংকটও৷

https://p.dw.com/p/1ForH
Bilder zu Interview mit Kooj Chuhan EINSCHRÄNKUNG
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World

তাই জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় ২০১০ সাল থেকে সাংগঠনিকভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ৷ এই খাতে ব্যয় করা হচ্ছে জিডিপির শতকরা একভাগ৷ কিন্তু এই অর্থ ব্যয় আর প্রকল্প নিয়ে এরই মধ্যে দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে৷ খোদ অর্থমন্ত্রী বলছেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় গঠিত তহবিলের অর্থ ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে৷''

জলবায়ু পরির্তনের হুমকির মুখে ৫৩ লাখ মানুষ

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বর্তমান উপকূলীয় এলাকার ৪৩ লাখ মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবেন৷ আর ২০৫০ সালে এই হতভাগ্য মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৩ লাখে৷

উপকূলীয় এলাকায় ৩ মিটার জলোচ্ছ্বাসে এখন ২০ লাখ মানুষ এর শিকার হন৷ এর চেয়ে বেশি জলোচ্ছ্বাস হলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আরো ৬০ ভাগ বেড়ে হবে ৩২ লাখ৷ জানা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে৷ শুধু তাই নয়, তীব্র জোয়ারের সময় বাতাসের গতি এবং জমির ক্ষয় বেড়ে যাবে আরো ১০ ভাগ৷

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫ লাখ গরিব মানুষ, যাঁদের মধ্যে ১৪ লাখ চরম দরিদ্র তাঁরা লবণাক্ত পানির কারণে পানীয় জল ও শুকনা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পনি সংকটে আছেন৷ তার সঙ্গে পানির চরিত্রও পরিবর্তন হয়ে গেছে, বদলে গেছে পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য৷ ২০৫০ সাল নাগাদ নাকি পানির এই লবণাক্ততা আরো বাড়বে৷ ৫২ লাখ গরিব মানুষ তখন এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হবেন, যাঁদের মধ্যে ৩২ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে থাকবেন৷

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় চার কোটি ৩২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ ভাগ৷ আশঙ্কার বিষয় হলো, এর মধ্যে চরম দরিদ্র দুই কোটি ৪৪ লাখ মানুষ তাঁদের মৌলিক প্রয়োজন খাদ্যের চাহিদা মিটাতে পারেন না৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এবং বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি৷ ১৯টি উপকূলীয় জেলায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে এক কোটি ১৮ লাখ৷

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার এই দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করে ‘ক্লাইমেট প্রজেকশন অফ দ্য ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা৷ বলা বাহুল্য, জলবায়ু পরিবর্তন উপকূলীয় এলাকার গরিব মানুষের জীবনধারণের জন্য চরম হুমকি৷

নেতিবাচক প্রভাব মেকাবিলায় যা করছে বাংলাদেশ

২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) কাজ শুরু করে৷ পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশ এখন বছরে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি মোকাবিলায়, যা জিডিপির শতকরা ১ ভাগ৷

২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ২,৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই খাতে৷ তবে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে এই বরাদ্দ করা টাকা কমছে৷ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতা থেকে জানা যায় যে, আসছে অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা কমেছে৷

এ পর্যন্ত যে ২,৯০০ কোটি টাকা এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে, তার মধ্যে শতকরা ৬৬ ভাগ অর্থ বিভিন্ন প্রকল্প এবং ৩৪ ভাগ অর্থ জরুরি দুর্যোগ মোকাবিলার কাজে লাগানো হয়েছে৷ ২,০০০ কোটি টাকায় ২১৮টি সরকারি এবং ৬৩টি বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে৷ সরকারি ৫৬টি প্রকল্প এরই মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে৷ এছাড়া বেসরকারি প্রকল্পগুলো মনিটিরিং-এর দায়িত্বে আছে সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লি কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)৷

প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের সময় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৬,৭৬০টি ঘর, ৭৪০টি গভীর নলকূপ, ১৪২ কিমি. বাধ, ১২,৮৭২টি পরিবারের সৌর বিদ্যুৎ এবং মোট ১৪৩.৩৫ মিলিয়ন গাছ লাগানোর কথা৷

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কৃষককে এই ধানের বীজ দেয়া হয়েছে৷ দেয়া হয়েছে চাষের প্রশিক্ষণ৷ তাছাড়া মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ প্রসঙ্গত, সূর্যমুখী ফুলের বিচি থেকে ভোজ্য তেল পাওয়া যায়৷

তহবিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ টিআইবি-র

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফান্ড নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে বরংবার৷ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি-র অভিযোগ, জলবায়ু তহবিলের টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় হচ্ছে৷ পারমাণবিক শক্তি, নবায়নযোগ্য এনার্জি ও সবুজ এনার্জি এক কাতারে ফেলে কার্বন গ্যাসমুক্ত জ্বালানি হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ তাদের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, ঋণ নেয়া ৫৫টি এনজিও-র কোনো অস্তিত্ব নেই৷ এছাড়া ১০টি নামসর্বস্ব, ১৩টি রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং মাত্র ১৭টি এনজিও ঠিকমতো কাজই করছে৷

এখানেই শেষ নয়৷ জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন নিয়ে রাজনীতিকরণ ও দুর্নীতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে টিআইবি৷ টাকা পাওয়া ১৩টি এনজিও-র নির্বাহী অথবা পরিচালনা পর্ষদ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ তাই রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে প্রকল্প পেয়েছে ৯টি এনজিও৷

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথায়, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় গঠিত তহবিলের অর্থ ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ তাই এক্ষেত্রে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি৷''

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘২০২০ সালের মধ্যে জিসিএফ-তহবিলের আকার ২শ' বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে, যার একটি অংশ বাংলাদেশও পাবে৷ কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান