জলবায়ু পরিবর্তন
৩১ মে ২০১৩অতিথি সারস পাখিরা জার্মানিতে এলে পক্ষিগবেষক গ্যুন্টার নোভাল্ড-এর ব্যস্ততা বেড়ে যায়৷ প্রতিদিন সহকর্মীদের সাথে পথে বেরিয়ে পড়েন তিনি৷ তাঁরা পাখিগুলি গুনে দেখেন৷ তাদের আচার আচরণে পরিবর্তন হয়েছে কিনা, তা বের করতে চেষ্টা করেন তাঁরা৷ নোভাল্ড বলেন, ‘‘জার্মানিতে শীত কাটানোর জন্য আগের চেয়ে বেশি সারস আসা শুরু করেছে৷ গত শীতে হালকা ঠাণ্ডা পড়ায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার সারস জার্মানিতে থেকে গিয়েছিল৷ তার আগের বছর ১৫ হাজার পাখি জার্মানিতে থিতু হয়েছিল৷''
এর কারণ – তখন আবহাওয়া বেশ গরম ছিল৷ তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পক্ষী দম্পতিরা তাদের বাসা ঠিক করে প্রজনন শুরু করে দিয়েছিল৷ শরৎ ও বসন্ত কালে উত্তর দিক থেকে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী পাখি জার্মানিতে পাড়ি জমায়৷ এদের মধ্যে থাকে আড়াই লক্ষ ধূসর সারস৷
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই এই পাখিগুলি আগের চেয়ে আরো বেশি দিন এখানে কাটাচ্ছে, এমনটি মনে করেন গবেষকরা৷ পক্ষী বিশেষজ্ঞ পেটার ব্যার্টল্ড মনে করেন, পাখিরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়৷ পক্ষিবিশেষজ্ঞ পেটার ব্যার্টল্ড বলেন, ‘‘পাখির জগতে এই পরিবর্তনটা খুবই স্পষ্ট এবং নাটকীয়৷ প্রায় ৪৫ জাতের পাখি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ছেড়ে ধীরে ধীরে উত্তরের দিকে চলে আসছে৷ উত্তর আফ্রিকা থেকেও আসছে পাখিরা৷''
একটি অভিবাসী পাখির নাম ‘বি-ইটার'৷ আসলে এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বাস করে৷ কিন্তু ইদানীং মনে হয় আর একটু উত্তরে গিয়েও সে আরাম পাচ্ছে৷ প্রায় ৫০০ জোড়া ইতিমধ্যেই জার্মানিতে বাচ্চা ফুটিয়েছে৷ এই সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে৷ পেটার ব্যার্টল্ড আরও বলেন, ‘‘সম্ভবত ৫০ বছরের মধ্যে ফ্লেমিঙ্গোদেরও দেখা যাবে এখানে৷ দুই তিনটা মরা গাছে তিন ধরনের টিয়া পাখিকেও বাচ্চা ফোটাতে দেখা যাবে৷ এই ধরনের পরিবর্তন ঘটতে আর বেশি দেরি নেই৷ একেবারে হাতের কাছে চলে এসেছে৷''
এই পরিবর্তনকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করার জন্য প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিদের গুনতে হয়, অর্থাৎ এক ধরনের পক্ষিশুমারি করতে হয় গবেষকদের৷ তাঁরা কড়া নিয়ম মেনে এই কাজটা করে আসছেন কয়েক দশক ধরে ৷
প্রথমবার ধরা পড়লে পাখিগুলির পায়ে নম্বরসহ একটি আংটি পরিয়ে দেয়া হয়৷ মারা যাওয়ার পর কোনো পাখিকে পাওয়া গেলে এই আংটিই হয় তার পরিচয়পত্র৷
বিভিন্ন দেশের পক্ষিবিজ্ঞানীরা এই আংটি খুলে নেন এবং বাকিদের জানান৷ এইভাবে গবেষকরা জানতে পারেন, পাখিগুলি কোথায় উড়ে গিয়েছিল৷ এইভাবে গত বছরগুলিতে এই পরিযায়ী পাখিদের আচার আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা, তার একটা চিত্র পাওয়া যায়৷
পেটার ব্যার্টল্ড মনে করেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাখিরা সবচেয়ে ভালো সংকেত হতে পারে৷ এর কারণ, প্রাণীদের মধ্যে পাখিদের সংখ্যাই সবচেয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়৷ যেমন আজ যদি কোনো শহরে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই একটি কোকিলকে দেখা যায়, তাহলে ৫০ থেকে ১০০ বছরের তথ্য মিলিয়ে বলা যায়, ১০০ বছর আগে পাখিটি তো এত তাড়াতাড়ি শহরে আসেনি!
তবে পক্ষিবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে কিছু দুঃখজনক বিষয়ও ধরা পড়েছে৷ যেমন তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, জার্মানিতে সারস পাখিরা প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ এবং এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের একটা যোগাযোগ রয়েছে৷
এসবি/ডিজি