জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর ঝুঁকি
তীব্র তাপদাহ, ধ্বংসাত্মক ঝড়, গলতে থাকা বরফ, শীর্ণকায় হয়ে আসা সৈকত; জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যটক আকৃষ্ট করার মতো স্থানগুলো দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে৷ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এর কী প্রভাব পড়ছে দেখুন ছবিঘরে৷
সৈকত সরু হচ্ছে
ঘুরতে এসে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব টের পেতে চান? চলে যেতে পারেন স্পেনর মায়োর্কার এস ট্রেঙ্কে৷ ২০ শতকের মধ্যভাগে স্বৈরাচারী ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর শাসনামলে এখানে বিশালাকৃতির কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি হয়েছিল, যা এতদিন লুকানো ছিল বালিয়াড়ির নীচে৷ এখন সেগুলো উপকূলজুড়ে অনাবৃত পড়ে আছে৷ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ক্রমশ সৈকতকে গ্রাস করছে৷ বিশেজ্ঞদের হিসাবে আগের চেয়ে সৈকতটি ৪০ মিটার ছোট হয়ে গেছে৷
তবুও পর্যটকের ঢল
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় একদিন মায়োর্কার মতো পর্যটন আকর্ষণীয় তীরগুলো একদিন সমুদ্রগর্ভে বিলীন হতে পারে৷ তবে এখনও এর প্রভাব পড়েনি পর্যটনে৷ বরং এই গ্রীষ্মে মায়োর্কাতে রেকর্ড পর্যটকের ঢল নেমেছে৷ জার্মানির জলবায়ু বিশেষজ্ঞ থমাস ডভোরাকের মতে, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ ঘোরাঘুরির অভ্যাস বদলেছেন এমন প্রমাণ খুব একটা পাওয়া যায় না৷’’
প্রভাব পড়েছে যেখানে
ইউরোপে প্রভাব না পড়লেও বিশ্বের অনেক দেশে জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব ঠিকই পড়তে শুরু করেছে৷ যেমন ক্যারিবীয় দ্বীপ বাহামা৷ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঘূর্ণিঝড় ডরিয়ানের আঘাতে দ্বীপটি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন খাতেও ধস নামে৷ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলায় কিছু অঞ্চলে স্কি রিসোর্টেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷
কৃত্রিম বরফ দিয়ে স্কি
আলপাইন অঞ্চলের স্কি রিসোর্টগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ভুক্তভোগী৷ অনেক রিসোর্ট তাই কামানের সাহায্যে কৃত্রিম বরফ ছিটিয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করছে৷ কৃত্রিম বরফ ইটালির উত্তরাঞ্চলের পর্যটনকে টিকিয়ে রেখেছে বলে উল্লেখ করেছেন সেখানকার পর্যটনমন্ত্রী আর্নল্ড শুলার৷ কিন্তু এরজন্যেও অবশ্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রার স্বল্পতাপ প্রয়োজন যা অনেক জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান শুলার৷
গন্তব্য বদলে পর্যটকরা
খরা আর তীব্র তাপদাহও অনেক জায়গায় পর্যটন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷ সেইসঙ্গে দাবানল, নতুন নতুন সংক্রামক রোগ, বিলীয়মান জীববৈচিত্র্যের মতো সংকটগুলো সামনের দিনে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠতে পারে৷ তবে এর ফলে উত্তরাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল দেশগুলোতে পর্যটন বাড়তে পারে৷ এরইমধ্যে তীব্র গরমে পর্যটকরা ভূমধ্যসাগর এড়ানোর চেষ্টা করছেন৷
মানিয়ে নেয়ার সময়
বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যটন নির্ভর অঞ্চলগুলোকে এখন থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কার সঙে মানিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে৷ এজন্য সহজে বলে দেয়ার মতো কোন সমাধান কারো হাতে নেই৷ প্রকৃতি অনুযায়ী এক এক অঞ্চলকে নিজেদের উপায় নিজেরাই বের করতে হবে৷ কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয়দের এই শিল্পের উপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্য খাতে মনযোগ দিতে হবে৷ আবার যেমন ইটালি গ্রীষ্মের বদলে পর্যটকদের বসন্ত বা শরতে আসার জন্য উৎসাহিত করতে পারে৷