হুমকিতে ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’
২২ মে ২০১৪যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা ‘ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্ট' এ রকম দুই ডজন স্থাপনার তালিকাসহ একটি প্রতিবদেন প্রকাশ করেছে, যেগুলো দাবানল, উপকূলীয় ভূমিক্ষয় এবং বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তন এই ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷
নিউ ইয়র্কের লিবার্টি আইল্যান্ডে হাডসন নদীর মুখে সোয়া শ' বছরের পুরনো ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি'-র পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছে নিউ ইয়র্ক হারবারের কাছে ‘অ্যালিস আইল্যান্ড'-এর নাম৷ এই দ্বীপ হয়ে ১৮৮৬ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ অভিবাসী অ্যামেরিকায় প্রবেশ করেন৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত একশ বছরে নিউ ইয়র্ক শহর ঘিরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বা এক ফুট৷ ২০০২ সালে হ্যারিকেন স্যান্ডির সময় লিবার্টি ও অ্যালিস আইল্যান্ড জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হলে দুই দ্বীপের অধিকাংশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয় এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র৷
এ দুটি দ্বীপের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা এখন এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ ফুট উঁচু প্লাবনেও সমস্যা না হয়৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভার্জিনিয়ার এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ জেমসটাউন আইল্যান্ড, সাউথ ক্যারোলাইনার সবচেয়ে পুরনো শহর চার্লসটন, দাস ব্যবসার অবসান ও অ্যামেরিকার গৃহযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ফোর্ট মনরোও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে৷
কেবল ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, উপকূলীয় এলাকায় নাসার সাতটি রকেট উৎক্ষেপণ ও নভোচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাঁচটিই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন৷
ভার্জিনিয়ায় নাসার রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৯৪৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে৷ ওই কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত ১৬০০টি রকেট উৎক্ষপণ করেছে নাসা৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকেই কেনেডি স্পেস সেন্টারের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসাবে বিবেচনা করছে নাসার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর৷ এ কারণে ফ্লোরিডা থেকে হিউস্টন পর্যন্ত এলাকার মধ্যে নাসার প্রতিটি স্থাপনার বাইরে উঁচু প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে৷ সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো৷
নাসার কর্মকর্তা রাসেল ডি ইয়ুং বলেন, ‘‘এক কথায় উঠে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ এখানকার স্থাপনাগুলো বিশাল৷ ফলে উপকূল থেকে আমাদের একটু একটু করে সরে আসতে হচ্ছে৷''
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝুঁকি কমাতে নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সংস্কার ও প্রস্তুতিতে বহু টাকা প্রয়োজন হবে ঠিক, কিন্তু কিছু না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে মূল্য দিতে হবে অনেক বেশি৷
ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্ট-এর পরিচালক অ্যাডাম মার্কহ্যাম বলেন, ‘‘যে বিপদের কথা আমরা বলছি তা কেবল হিমশৈলের দৃশ্যমান অংশ৷ আমাদের এখন দুর্যোগ প্রশমন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে৷ আর তা বাস্তবায়নে যেখানে যে পরিমাণ তহবিল লাগে, তার যোগান দিতে হবে৷''
জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)