জরুরি পরিস্থিতিতে ইউরোপের ঐক্যের পরীক্ষা
২২ এপ্রিল ২০২০করোনা সংকটের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঐক্যের অভাব ঘরে-বাইরে এই রাষ্ট্রজোটের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি করছে৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট কাটানোর প্রশ্নে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইইউ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে আবার ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা চালানো হবে৷ সদস্য দেশগুলি মতপার্থক্য কাটিয়ে সংকটের মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ একমাত্র বাজেট ঘাটতি ও ঋণভার সংক্রান্ত নিয়ম সাময়িকভাবে শিথিল করার বিষয়ে ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে৷
সবার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘমেয়াদী বাজেট স্থির করতে হবে৷ ব্রেক্সিটের ফলে অবশিষ্ট ২৭টি সদস্য দেশগুলিকে সেই তহবিলের জন্য অর্থ ভাগ করে নিতে হবে৷ সব দেশের সম্মতি ছাড়া সেই বাজেট অনুমোদন করা সম্ভব নয়৷ ২০২১ থেকে ২০২৭ সালের এই বাজেটের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব এক পুনরুদ্ধার তহবিল যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইইউ দেশগুলির সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল৷
করোনা সংকট সামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে ফেরার লক্ষ্যেও কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে ইইউ৷ ইইউ কমিশনের আশঙ্কা, বর্তমান সংকটের ফলে অর্থনীতির প্রায় দশ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে৷ সেই ধাক্কা সামলাতে দেড় লাখ কোটি ইউরো অঙ্কের এক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি স্থির করার চেষ্টা চলছে৷
সদস্য দেশগুলির সহায়তার প্রশ্নে ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা চলছে৷ বিশেষ করে দক্ষিণের দেশগুলির দীর্ঘদিনের বিশাল বাজেট ঘাটতি ও ঋণভারের দায় ভাগ করে নেবার প্রশ্নে জার্মানিসহ উত্তরের অনেক দেশের অবস্থান অনড় রয়েছে৷ তাই ‘করোনা বন্ড'-এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সেই দায় ভাগ করে নেবার প্রশ্নেও বিরোধিতা করে চলেছে এই দেশগুলি৷ সংকটের সুযোগ নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কাও তারা দূর করতে চায়৷ জরুরি অবস্থায় নেওয়া যে কোনো পদক্ষেপের নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থির করার উপরও জোর দিচ্ছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের মতো দেশ৷ তাছাড়া তাদের মতে, বাড়তি আর্থিক সহায়তা ঋণ হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে৷ অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই ঋণ ফেরত দেবার শর্ত মেনে নিতে হবে৷
এই ব্যবধান কাটাতে ইইউ কমিশন দুই শিবিরের মধ্যে আপোশের চেষ্টা করছে৷ যৌথ তহবিল গঠন করে এবং সদস্য দেশগুলির ২০২১-২০২২ সালের বাজেটের জন্য গ্যারেন্টি সাময়িকভাবে বাড়িয়ে অর্থের ‘অপব্যবহার’ সংক্রান্ত আশঙ্কা দূর করতে চায় কমিশন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি তরান্বিত করতে এমন সব উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ সেক্ষেত্রে জাতীয় সরকারের বদলে ইইউ কমিশনের মাধ্যমে অর্থ ব্যয় করা হবে৷
বৃহস্পতিবারের শীর্ষ সম্মেলনে কিছু পদক্ষেপ অনুমোদন করা সম্ভব হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এর আওতায় বেকারত্ব প্রতিরোধ করতে বেতন ও মজুরির ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকি, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে বিপর্যস্ত কোম্পানিগুলির জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও ইউরো এলাকার বেলআউট তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ দেওয়া হবে৷ জুন মাসেই এই সব পদক্ষেপ কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)