জম্মু-কাশ্মীরের হস্তক্ষেপ নয়
৬ জুন ২০১৮ভারতীয় সংবিধানের ৩৫(এ) নং ধারায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে য়ে বিশেষ অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয়েছে৷ মামলাটি দায়ের করেছে উই দ্য সিটিজেন নামে একটি এনজিও৷ তাদের মতে, এই ধারা ভারতের অভিন্নতার মূলে কুঠারাঘাত করেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য সাংবিধানের এই বিশেষ সংস্থানের বিরুদ্ধে কোনো হলফনামা দিতে রাজি নয়৷ সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এর আগেও এই ইস্যু নিয়ে অনেক জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে৷ এখন সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে যে রায় দেবেন, সরকার তা মেনে নেবে৷ এই বিশেষ সংস্থান ১৯৫৪ সালে তত্কালীন মন্ত্রিসভার সুপারিশে রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ সরকার মনে করে, সংবিধানের ৩৫(এ) ধারাটি এখন আইনি ব্যাখ্যার ওপর দাঁড়িয়ে৷ শীর্ষ আদালতই তা স্থির করবেন৷ এই বিষয়ে শুনানি চলছে৷ আদালত অন্তর্বর্তী রায় দিলে সেটাকেই সরকার মেনে চলবে৷ কাজেই পাল্টা হলফনামা দেবার কোনো প্রয়োজন নেই৷ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৬ই অগাস্ট৷ গত বছরই কেন্দ্রীয় সরকার তার এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিল৷
জম্মু-কাশ্মীরের চলতি পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিষয়টি যে রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই সংবেদনশীল তাতে সন্দেহ নেই৷ এই বিষয়ে কাশ্মীরের জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একজোট৷ সেক্ষেত্রে রাজ্যের স্বাধিকার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যদি বিরুদ্ধে যায়, তাহলে কাশ্মীরে তার যে অভিঘাত পড়বে, তা সামলানো সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না৷ কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে মোদী সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আলোচনার পথ প্রশস্ত করতে দীনেশ্বর শর্মাকে পাঠিয়েছে৷ সেই প্রক্রিয়াও আপাতত অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, জম্মু-কাশ্মীরে রয়েছে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার৷ কাজেই সেখানেও বিজেপি নিরুপায়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন, রাজ্যের জনগণের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে মোদী সরকার কিছু করবে না৷ যদিও এই বিজেপি এক সময়ে কাশ্মীরিদের স্বাধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল৷
এই প্রসঙ্গে প্রবীণ সাংবাদিক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘বিজেপি এখন কার্যত ওদের যেসব পুরোনো চিন্তাভাবনা ছিল, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছে রদ করা ইত্যাদি থেকে সরে আসছে৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, সংবিধান আমাদের কাছে হোলি বুক. যদিও এটা ওদের মনের কথা নয় এবং ছিল না৷ দ্বিতীয়ত, বিজেপি কাশ্মীরে ক্ষমতায় আছে এরং কাশ্মীরের পরিস্থিতি যে সামাল দিতে পারছে না, সেটাও বুঝতে পেরেছে৷
এই দুটো মিলিয়ে বিজেপিতে পরিবর্তন আসছে৷ আগেকার মৌলবাদী নীতি আর কাজ করছে না৷ একটু বাড়িয়ে বললে বলা যায়, আরএসএস যে প্রণব মুখোপাধ্যাকে তাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এটা তারই একটা প্রতিফলন৷বিজেপির বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিও পালটাচ্ছে৷ এই যে উপনির্বচনে হেরে যাচ্ছে, সবই এরমধ্যে আছে. বুঝতে পেরেছে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা অবাস্তব৷''
রমজান মাসে সংঘর্ষ বিরতি সত্বেও পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ৷ রোজই পাথর-বৃষ্টি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলি চলছে৷ দু'পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ সুপ্রিম কোর্টের চুড়ান্ত রায়ের আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং বিরোধী নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সংবিধানের সংস্থানে রাজ্যকে যে বিশেষ অধিকার এবং সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার পরিবর্তনে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন৷ মেহবুবা মুফতি এমনও বলেছিলেন, যদি ৩৫(এ) ধারা রদ বা সংশোধন করা হয়, তাহলে ভারতের জাতীয় পতাকা বহন করার মতো লোক রাজ্যে আর থাকবে না৷
সংবিধানের ৩৫(এ) ধারায় যা বলা হয়েছে
১৯৫২ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু এবং তত্কালীন জম্মু-কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লার মধ্যে দিল্লি চুক্তির ফলে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়৷ তারপর ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন৷ এই চুক্তি অনুসারে, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ সম্পত্তি বেচাকেনা করতে পারবে না৷ স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সরকারি চাকরি এবং স্কলারশিপ সংরক্ষিত থাকবে৷ কোনো কাশ্মীরি মহিলা যদি অন্য রাজ্যের কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে তিনি রাজ্যে বিষয়-সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ত্ব হারাবেন৷ অন্যদিকে স্বাধিকার বলতে বোঝানো হয়েছে, প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সব কিছুই থাকবে রাজ্য সরকারের হাতে৷