ছয় বেসরকারি ব্যাংকের নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫%
২৩ নভেম্বর ২০২৩এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা৷ যা ব্যাংকিং খাতে চলমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে৷
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৪৩ বেসরকারি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৩৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল এই ছয় প্রতিষ্ঠানের৷
এই ছয় ব্যাংকের মধ্যে বছরের প্রথম নয় মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি সবচেয়ে বেশি৷ যা ছয় হাজার ৬৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা৷
ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মেহমুদ হোসেন বলেন, ‘‘সম্প্রতি আমরা খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ আদায় করেছি৷ তাই বছরের শেষ প্রান্তিকে আমাদের খেলাপির পরিমাণ কম হবে৷''
তবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা৷
প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংকের গত নয় মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৯৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে৷
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (বিসিবি) খেলাপি ঋণ ৩৮ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা৷ বিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিসিবির বিতরণ করা মোট ঋণের ৬০ শতাংশ খেলাপি৷'' খেলাপি ঋণের উচ্চহারের কারণে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৫৪২ কোটি টাকা৷
গত বছর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে ২১ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৪১ কোটি টাকা৷ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর মফিজ বলেন, ‘‘আমরা এখন নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে ঋণ পুনরুদ্ধারের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি৷''
গত নয় মাসে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সাত দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৬৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক সাত শতাংশ৷ পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রদান নির্বাহী তারেক রিয়াজ খান স্বীকার করেছেন যে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে পদ্মা ব্যাংক তাদের নথিতে ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কমিয়ে দেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘রাতারাতি খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হবে না৷ তবে এর পরিমাণ কমাতে আমরা নানান আইনি উদ্যোগ নিচ্ছি৷''
বিলুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে জন্ম নেওয়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৬৮৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা৷ এটি গত বছর শেষে ছিল ৬৮৬ কোটি ১০ লাখ টাকা৷ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘যে ঋণ ওরিয়েন্টাল ব্যাংক বিতরণ করেছে তা আমাদের নয়৷''
ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘ছয় ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ গড় হারের তুলনায় বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়৷''
‘‘সব ধরনের ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে৷ ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়,'' বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
এসএইচ/কেএম (দ্য ডেইলি স্টার)