ছয় বছরে নিহত সাড়ে তিন হাজার
২৩ নভেম্বর ২০১৪‘সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি' ও ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)' তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত শতাধিক ঘটনায় এসব শ্রমিক নিহত হন৷ এর মধ্যে শুধু চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ২১৭টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬০ জন শ্রমিক৷ এর মধ্যে অগ্নিকাণ্ডে ১২ জন৷
পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মোট ৩০৩৬ শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷ যার মধ্যে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ২৪৭ জন৷ আর ভবন ধসে প্রায় ২০০০ শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷ মোট নিহত শ্রমিকদের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি তৈরি পোশাক কারখানার৷
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কারখানাগুলো শ্রমিক নিরাপত্তার দিকে নজর না দেয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পর অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চাপে পোশাক কারখানার মালিকরা কারখানায় শ্রমিক নিরপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে সত্য কিন্তু তা সর্বক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নয়৷ আর পোশাক কারখানা ছাড়া অন্য যেসব কারখানা রয়েছে সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ রয়েই গেছে৷ সেদিকে নজর দেয়ার কেউ নেই৷''
সিরজুল ইসলাম বলেন, ‘‘শ্রমিক নিরাপত্তা আইন পর্যাপ্ত নয়৷ আর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণের বিধানও কার্যকর নয়৷ যা আছে তা যত্সামান্য৷ শ্রমিকদের গ্রুপ বীমার নামে যা চালু আছে তা হাস্যকর৷ তাজরীন ফ্যাশানস-আগুন লাগার পর দেখা গেছে গ্রুপ বীমার নামে সর্বোচ্চ ৫০ জন শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ তাও জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকার কম৷''
এদিকে মানবাধিকার নেতা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেকোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব৷ কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছে না৷ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পোশাক কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ শুরু হয়েছে৷ কিন্তু নিজেদের তাগিদ থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে না হলে সেই কাজ শেষ পর্যন্ত কতটুকু নির্ভরযোগ্য হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের শিল্প কারখানার মালিকরা মুনাফাকেই প্রধান করে দেখেন৷ তাই তারা চান শ্রমিকদের কম সুবিধা নিয়ে বেশি মুনাফা করতে- যা দুঃখজক৷''
‘‘শ্রম মন্ত্রণালয় বা কারাখানা পরিদর্শকরাও তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেন না৷ ফলে শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে এত বেশি হারে দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছেন'' বলে মনে করেন নূর খান৷
অন্যদিকে মজুরি কমিশনের সাবেক প্রধান ইকতেদার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি ২০১৪ সালের সংশোধিত শ্রম আইনে পরিস্কার করা হয়েছে৷ কিন্তু এই আইন মানা হচ্ছেনা৷ সরকারের দায়িত্ব হল এই আইন যাতে সবাই মানেন তার ব্যবস্থা করা৷ কিন্তু সরকার তা করছে বলে মনে হয়না৷'' তিনি বলেন, ‘‘আহত বা নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের যে বিধান তা সামান্য৷ আর তা আদায় করাও জটিল৷ মামলা ছাড়া তা আদায় করা যায় না৷ দরিদ্র শ্রমিকরা মামলা করতে পারেন না৷ আর ক্ষতিপূরণও পান না৷ রানা প্লাজা ধসের পর যেটুকু ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে তাও ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কারণে৷''
‘সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি' ও ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)' তাদের প্রতিবেদনে গার্মেন্টসের মতো প্রতিটি সেক্টরে নিরাপত্তা কার্যক্রম বাড়ানো এবং রাজউক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরসহ আইন বাস্তবায়নকারী অন্যান্য সংস্থার দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি করাসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য৷