ছিল রাজধানী, হল সালাফিদের ঘাঁটি
১৪ নভেম্বর ২০১৪সাবেক রাজধানী বন আজও একটি অভিজাত শহর: এখানে জাতিসংঘের একটি কার্যালয় থেকে শুরু করে ডয়চে পোস্ট কিংবা ডয়চে টেলিকম-এর মতো বড় বড় কোম্পানির হেডকোয়ার্টার্স আছে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে রোমান্টিক রাইন নদী, বেটোফেন ফেস্টিভাল এবং কার্নিভাল৷ সেই ছোট্ট, ছিমছাম, সুন্দর বন শহরের এখন মিডিয়ায় নাম করা হচ্ছে সালাফি আর ইসলামপন্থি, সন্ত্রাসবাদ আর জিহাদের সঙ্গে৷
বন রেলওয়ে স্টেশনে বোমাবাজির ব্যর্থ প্রচেষ্টার দায়ে ড্যুসেলডর্ফের প্রাদেশিক আদালতে এক ব্যক্তির বিচার চলেছে, যে জাতিতে জার্মান এবং পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে৷ তবে বন-এর সঙ্গে জঙ্গি ইসলামি মতাদর্শের সম্পর্ক বহুদিনের: বন থেকে আগত জিহাদি বেকাই হারাশ আফগানিস্তানে নিহত হয় ২০১০ সালে; তার আগে হারাশ একটি ইন্টারনেট ভিডিও-তে জিহাদের ডাক দিয়েছিল৷ পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রেরিত ভিডিও বার্তায় জার্মানিতে সন্ত্রাসী আক্রমণের আহ্বান জানিয়েছিল ইয়াসিন আর মুনির চৌকা – এই দুই ভাইয়ের বাড়িও ছিল বন শহরে৷
ইসলাম-বিদ্বেষ নিয়ে উদ্বেগ
বন যে দৃশ্যত উগ্রপন্থি সালাফি-দের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে কলেটা মানেমান-ও চিন্তিত৷ কলেটা হলেন বিদেশি-বহিরাগতদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে বন শহরের সরকারিভাবে নিযুক্ত মধ্যস্থ৷ তাঁর প্রধান চিন্তা হল কিশোর-তরুণদের উগ্রপন্থি হয়ে ওঠা নিয়ে৷ অপরদিকে তাঁর চিন্তা ক্রমবর্ধমান ইসলাম-বিদ্বেষ নিয়ে৷ বন যে সালাফি-দের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে, কলেটার মতে তার কারণ: রাজধানী থাকার আমলেই বন-এ অনেকগুলো মসজিদ গড়া হয়েছিল৷ আরব দেশগুলির দূতাবাসগুলি নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যে, তাদের কর্মীরা নমাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতে পারবেন৷ এইভাবেই কয়েকটি মসজিদ উগ্রপন্থি মুসলিমদের দেখাশোনার স্থান হয়ে ওঠে৷
আজ আরবি হল বন-এ জার্মানের পরে সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা৷ বিশেষ করে বন-এর দক্ষিণাংশে, বাড গোডেসব্যার্গ এলাকায়, শুধু আরবি বলেই কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়৷ যে কারণে আরব দেশগুলি থেকে বহু মানুষ বাড গোডেসব্যার্গে আসেন বিশেষত চিকিৎসা করানোর জন্য৷ তবে শুধু চিকিৎসাপ্রার্থীরাই নন, সেই সঙ্গে উগ্র ইসলামপন্থিদেরও আগমন ঘটে থাকে৷ হামবুর্গ, উল্ম ইত্যাদি শহরে তাদের দেখাসাক্ষাতের জায়গাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পর ২০০৫ সাল থেকে নাকি সুপরিচিত সালাফি-রা বন-এ এসে ভিড় জমিয়েছে৷
বাড গোডেসব্যার্গের কেন্দ্রে আজ একাধিক আরব রেস্তোরাঁ, নানা ধরনের আরব দোকানপাট, যাদের নাম আবার আরবি ভাষায় লেখা – সেই সঙ্গে একাধিক আরব কল-শপ, যেখান থেকে দেশে টেলিফোন করা যায়৷ বাড়ির দালালরা আরবি কায়দায় সাজানো, স্বল্প মেয়াদে ভাড়া নেওয়ার উপযোগী ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকে৷ বাজারে বা ফুটপাথে বোরখা পরা মহিলা হামেশা চোখে পড়বে৷ বলতে কি, এই গ্রীষ্মেই একটা দোকান খোলা হয়েছে, যেখানে ‘‘মহিলাদের জন্য ইসলামি বস্ত্র'' পাওয়া যায়৷
বাদশাহ ফাহদ অ্যাকাডেমি
বাড গোডেসব্যার্গের আরো দক্ষিণে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে ‘ক্যোনিশ ফাহদ অ্যাকাডেমি'-র ভবন৷ বাইরে থেকে দেখতে একটা মসজিদের মতো; আসলে এটি সৌদি আরবের একটি বৈদেশিক স্কুল৷ বন-এ সালাফি মতাদর্শ শিকড় গাড়ল কি করে, এ প্রশ্ন উঠলেই রাজা ফাহদ অ্যাকাডেমি-র নাম এসে পড়বে৷ স্কুলের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম আল-মেগ্রেন অবশ্য সে কথা মানতে রাজি নন৷ তিনি জানালেন জার্মান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা; প্রতি বছর স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলি রিভাইজ করার কথা; পাঠক্রমের শেষে শুধু আরব মাধ্যমিক নয়, সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা রাখা আছে৷
২০০৩ সালে এই স্কুলটি যখন জার্মান অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর বিভাগের নজরে আসে, তখন পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন: এক শিক্ষক নাকি ‘পবিত্র যুদ্ধের'' ডাক দিয়েছিলেন; সপ্তাহে মাত্র এক ঘণ্টা জার্মান শেখানোর ব্যবস্থা ছিল; সারা জার্মানি থেকে আরব পরিবারবর্গ বন-এ এসে বাসা বেঁধেছিলেন শুধু যাতে তাদের সন্তান হানিকর পশ্চিমি প্রভাব মুক্ত পরিবেশে পড়াশুনা করতে পারে, সেই জন্য৷ বন-এর জিহাদি বেকাই হারাশ-ও ছিল এই অ্যাকাডেমি-র ছাত্র৷
সে সব দিন গেছে, সেই সঙ্গে বাদশাহ ফাহদ অ্যাকাডেমির ছাত্রসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে দেড়শো'য়, যদিও এই স্কুলে ছ'শো পড়ুয়ার পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে৷ অপরদিকে অ্যাকাডেমির কাছে অপর একটি সাধারণ স্কুলে মুসলমান ছাত্রছাত্রীর অনুপাত আজ ৮০ শতাংশ৷