ছাত্রলীগ যেন আর ঐতিহ্যের বড়াই না করে
২৪ মার্চ ২০২১বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর, মঙ্গলবার ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷’’
বিবিসি বাংলা বলছে, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে ২০-২৫ জন৷’’
বামপন্থি সংগঠনগুলোর দাবি, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ বরাবরের মতোই ছাত্রলীগ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, একই সংগঠনের দুই নেতার বক্তব্য দু-রকম৷
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘‘ছাত্রলীগ হামলায় জড়িত নয়। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চলা অব্যাহত মিথ্যাচারের আরেকটি নমুনা আজকের এই হামলার অভিযোগ। ছাত্রলীগের সঙ্গে হামলার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রগতিশীলতার নামে কিছু বহিরাগত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছিল।’’
তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগেরও পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল৷ কিন্তু কী কর্মসূচি তা তিনি জানাননি৷ লেখক আরো বলেছেন, ‘‘ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রগতিশীলতার নামে যারা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, জামাতের পেইড এজেন্ট, সেইসব মাদকাসক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো৷’’ ‘প্রতিপক্ষকে’ জামাত-শিবির ইত্যাদি বলে খারিজ করার চেষ্টা ছাত্রলীগ অতীতেও বহুবার করেছে৷ অতি ব্যবহারে পুরোনো এই কৌশল কার্যকারিতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে চলেছে৷ আর ‘আইনি পদক্ষেপ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেই পদক্ষেপ বাস্তবে কোনোদিন দেখা যাবে কিনা তা লেখকই ভালো বলতে পারবেন৷ তার আগে অন্যের কর্মসূচিতে বাগড়া দেয়ার অধিকার ছাত্রলীগের আছে কিনা এ প্রশ্ন রাখলেও সদুত্তর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ৷
নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি তথ্যনির্ভর না হলে তো মুশকিল৷ এমন বিবৃতি কে বিশ্বাস করবে?
ভাবনার বিষয় হলো, ছাত্রলীগের যে নেতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খবর বেশি জানার কথা, তিনি জানেন কম, আর যার হয়ত একটু কম জানলেও চলে, তিনি জানেন বেশি৷
তাই ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে যখন মঙ্গলবারের ঘটনা সম্পর্কে এত কথা বলতে শুনি, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেনই না৷
এ-ও কি সম্ভব?
আসলে ছাত্রলীগকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদেরই এখন একটা বৈঠক করা দরকার৷ সেই বৈঠকে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য নিয়ে বড়াই এখন বন্ধ করা উচিত কিনা- এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতারাই আলোচনা করুক৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ছাত্রলীগ হিসাব করে দেখুক এই পঞ্চাশ বছরে তাদের একক অর্জনের ছোট একটা তালিকাও হতে পারে কিনা৷ সংগঠনটির এ প্রজন্মের প্রায় জনবিচ্ছিন্ন অধিকাংশ নেতা-কর্মী আগের প্রজন্মের গৌরবে ভাগ বসানোর নৈতিক অধিকার রাখেন কিনা তা নিয়েও আলোচনা হওয়া জরুরি৷
নইলে প্রতিবাদ আর অধিকার আদায়ের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার দৃষ্টান্ত আরো দীর্ঘ হবে আর এক সময় নেতাদের মুখে ঐতিহ্য নিয়ে অহঙ্কারের কথা শুনে ছাত্রলীগ কর্মীরাও হয়ত হাসবে৷
২০১৯ সালের ৯ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...