ছত্তিশগড় ভোট পর্ব
১২ নভেম্বর ২০১৩ভারতের সব থেকে বেশি মাওবাদী প্রভাবিত ২৬টি জেলার মধ্যে ছত্তিশগড়ে আছে ৮টি জেলা৷ ছত্তিশগড় রাজ্যে প্রথম দফায় যে ১৮টি আসনে ভোট নেয়া হয়, তার মধ্যেই পড়ে বস্তার, দান্তেওয়াড় ও রাজনন্দনগাঁও৷ ১৮টি কেন্দ্রকে নিরাপত্তার জালে মুড়ে ফেলা হলেও ভোটারদের মন থেকে ভয় দূর হয়নি৷ কারণ, সেখানে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানকার লোকেরা গত দশ বছর মাওবাদীদের ভয়ে ভোট দেননি৷ ভোট কাকে বলে তাঁরা সেটা জানেনও না৷ এবারের ভোটে মাওবাদীদের সহিংসতা দমন প্রধান নির্বাচনি ইস্যু৷ শুধু শাসক দল বিজেপির নয়, কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারেরও৷ এবারের ভোট পর্ব যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং ভোটের হার যাতে বাড়ে তার জন্য বিশেষ প্রচার চালায় প্রশাসন৷
মাওবাদীরা ভোট বয়কটের ফতোয়া দেয়া সত্ত্বেও প্রাথমিক হিসেবে ভোটের হার ৫০ শতাংশের মতো৷ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের হুমকি দেয় মাওবাদীরা৷ গণতন্ত্র প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে বেশ কয়েকটি ছোট মাপের বিস্ফোরণ ঘটায়৷ তবে এবার রাজ্যের মাওবাদী এলাকাগুলির ভোটাররা সেই হুমকিকে তেমন আমল দেয়নি বলেই মনে হচ্ছে৷ মাওবাদীদের ছত্রছায়ায় থাকলে তাঁদের অবস্থা আরো খারাপ হবে ধরে নিয়ে তাই তাঁরা আগেকার ধারণা বদলেছে, এমনটাই ইঙ্গিত৷
নিরাপত্তা বাহিনী ৯০টি অভিযান চালিয়ে ২৬০ কিলো বিস্ফোরক উদ্ধার করে, তার মধ্যে ১০ কিলো পাইপ বোমা আছে৷ গ্রেপ্তার করা হয় সন্দেহভাজন ৪৬ জন মাওবাদীকে৷ ভোট কেন্দ্রগুলিতে যাতায়াতের রাস্তায় মাইন পোঁতা আছে কিনা – তা খুঁজে দেখতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়৷ পুলিশ কর্মীরা ১৭-১৮টি কম শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে৷ মাওবাদী হামলায় একজন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হন এবং আহত তিনজন৷ গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাওবাদীদের হাতে মজুদ আছে বিশ হাজার কিলোর মতো বিস্ফোরক৷
গোয়েন্দা সূত্রেই বলা হয় যে, তারা মহিলাদের প্রথমে পাঠায় নিরাপত্তা কর্মীদের গতিবিধির দিকে নজর রাখার জন্য৷ তারপর মাওবাদী ক্যাডাররা ভোটার সেজে পোলিং বুথে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়৷ প্রশাসন মাওবাদীদের গতিবিধির দিকে নজর রাখতে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ছাড়াও তৈরি রাখা হয় বিমান অ্যাম্বুলেন্স৷ দুর্গম প্রত্যন্ত মাওবাদী এলাকাগুলিতে ভোটের উপকরণ, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং ভোটকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টার৷ মাওবাদীরা টেলিফোন টাওয়ার যাতে উড়িয়ে দিতে না পারে, তার জন্য আধা-সামরিক বাহিনীর ট্রাকে যোগাযোগ টাওয়ার বসানো হয়৷
প্রথম দফায় ভোটারদের মোট সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৩ হাজার৷ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হলো শাসকদল বিজেপি এবং কংগ্রেস৷ তৃতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে মাওবাদী কমিউনিস্ট সিপিএম (এমএল), যারা নির্বাচিত সরকারকে হিংসার পথে উচ্ছেদ করে নিজেদের শাসন কায়েম করতে চায়৷ প্রথম দফায় যে ১৮টি আসনে ভোট হয়, যেটা ছত্তিশগড় রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এলাকা৷ অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, শিক্ষার অভাব ঐ সব জনজাতি-প্রধান এলাকার মানুষদের নিত্যসঙ্গী৷ এই প্রথমবার ছত্তিশগড়ের ভোটাররা ভোট না দেবার অধিকার ‘নোটা' প্রয়োগ করার সুযোগ পান৷ ভারতের শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায় কার্যকর করার জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে‘নোটা' লেখা একটি বিশেষ বোতাম রাখা হয়েছিল৷