চ্যালেঞ্জের মুখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন
১১ এপ্রিল ২০১৭বাংলাদেশে আগের আইনে ১৮ বছরের নীচে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল৷ গত মার্চ মাসে প্রণীত নতুন ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭'-এ ১৮ বছরের নীচে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হলেও, ঐ একই আইনের বিশেষ বিধানে তার আবার সুযোগও রাখা হয়েছে৷ বিশেষ বিধানের ১৯ ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ ও পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিয়ে সম্পাদিত হলে, তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না৷'
এই বিশেষ বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও নারীপক্ষ৷ সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চ প্রাথমিক শুনানির পর চার সপ্তাহের রুল দেন৷ রুলে বিশেষ বিধান কেন বাতিল করা হবে না সরকারকে তা জানাতে বলা হয়েছে৷
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান ফাওজিয়া করিম ফিরোজ আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিশেষ বিধানটি আমাদের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ, এই আইনেরই ৭ এবং ৮ ধারা, পেনাল কোড এবং নারী ও শিশু অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদগুলোর বিরোধী৷ এই কারণে আমারা ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭'-এর বিশেষ বিধান বাতিল চেয়েছি৷''
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে শিশু ও নারীর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে৷ বিশেষ বিধান উন্নয়নের পরিপন্থি৷ এই আইনেরই ৭ এবং ৮ ধারায় ১৮ বছরের নীচে বিয়ে হলে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের শাস্তির বিধান আছে৷ শুধু তাই নয়, যারা বিয়ে করবেন, তাদেরও শাস্তির কথা বলা হয়েছে৷ বিশেষ বিধান ওই দু'টি ধারার বিরুদ্ধে যায়৷''
ফাওজিয়া করিম আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশ শিশু ও নারীর অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সদনগুলোর স্বাক্ষরকারী৷ চলতি বছর সিডও সনদে বাংলাদেশকে বাল্যবিবাহ রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে এবং বাংলাদেশও পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে৷ কিন্তু বিশেষ বিধান অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে যায়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ বিধান রাখায় বাল্যবিবাহ বেড়ে যাবে৷ এছাড়া এই বিধান ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নারী ও শিশুকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে৷ এই বিধানটি নারী ও শিশুর সাস্থ্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং নারী শিক্ষার অন্তরায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহের আধিক্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে এখন অষ্টম৷ বাল্যবিবাহ যখন পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল, তখনই এই অবস্থা৷ এখন নতুন আইনে বিশেষ ব্যবস্থায় বাল্যবিবাহের সুযোগ থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷''
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘থিংক ট্যাংক' ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট(আইএফপিআরআই)-এর এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গত দু'দশকে বাল্যবিবাহের হার শতকরা ৬২ দশমিক ৩ ভাগ থেকে কমে ৪৩ ভাগ হয়েছে৷
আইএফপিআরআই-এর গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার ছিল শকরা ১৫ দশমিক ৯ ভাগ, ১৫-১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৫ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্যবিবাহের হার ছিল শতকরা ৬২ দশমিক ৩ ভাগ৷
২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সালে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার শকরা ৫ দশমিক ৪ ভাগ, ১৫-১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ৩৭ দশমিক ৮ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্যবিবাহের হার শতকরা ৪৩ দশমিক ২ ভাগ৷
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার কমলেও তাতে আত্মতৃপ্তির তেমন কোনো কারণ নেই৷ কারণ গত দু'দশকে ১৫ বছরের কম বয়সিদের বিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও, মধ্যবর্তী ১৫-১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার তেমন কমেনি৷ দৃশ্যত, মাত্র ১০ ভাগের মত কমেছে৷