1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চ্যালেঞ্জ উৎরাতেও নানা চ্যালেঞ্জ

Samir Kumar Dey
সমীর কুমার দে
২৩ আগস্ট ২০২৪

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে৷ এই চ্যালেঞ্জগুলো উৎরাতে গিয়েও তাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে৷

https://p.dw.com/p/4job2
একটি থানার ডেস্কে দুই পুলিশ সদস্য, তাদের সামনে দুই ব্যক্তি
বাংলাদেশে এই মুহুর্তে প্রথম যে কাজে হাত দেওয়া দরকার সেটা আইন -শৃঙ্খলাছবি: Munir Uz Zaman/AFP

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসনিজেই বলেছেন, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী ও মিডিয়াতে সংস্কার করার পরেই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে৷ ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে এই সরকার সংস্কার করতে চায় সেটা পরিস্কার হয়ে গেছে৷ এখন তাদের কাজ শুরু করার পালা৷ এখনো কি কোন সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে? যে কাজগুলো হচ্ছে, তাকে কি সংস্কার বলা যাবে?

একজন উপদেষ্টা বলেছেন, এখন ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করছেন তারা৷  প্রথমেই আসি, প্রধান উপদেষ্টা যে সংস্কারগুলো করতে চেয়েছেন সেই বিষয়ে৷ তিনি নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা বলেছেন৷ কিন্তু কিভাবে হবে এই সংস্কার? কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে হলে সেটা সংসদে পাশ করাতে হবে৷ এখন এই সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো যদি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার অনুমোদন না করে বা সংশোধন করে, তাহলে সংস্কার টিকবে কিভাবে? সংসদে পাশ না হলে তো বৈধতাও মিলবে না৷ দ্বিতীয়ত, তিনি প্রশাসনের সংস্কারের কথা বলেছেন৷ এখন আমরা যেটা দেখছি, আগের সরকারের সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সরিয়ে অপেক্ষাকৃত বঞ্চিতদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ ফলে প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেছে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে যারা একটু সোচ্চার ছিলেন, তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে৷ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হচ্ছে৷ আবার নতুন কিছু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেওয়া হচ্ছে৷ সকালে নিয়োগ দিয়ে আবার বিকেলে বাদও দেওয়া হচ্ছে৷

এমন পরিস্থিতিতে কোনো নীতিতে অটল থাকতে পারছে না সরকার৷ যারা যে দাবি নিয়ে আসছে, সরকার সেটাই করছে৷ স্থপতি ও তথ্যচিত্র, নির্মাতা শাকুর মজিদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘একদল ছাত্র এসে বলল এইচএসসি পরীক্ষা দেবো না, আপনি বাতিল করে দিলেন৷ কিছুদিন পর যদি আবার কিছু ছাত্র এসে বলে এখন আর আপনাদের থাকার দরকার নেই, তখন কী করবেন?'' প্রেসক্লাব, সচিবালয়কেন্দ্রিক এলাকা এখন দাবি-দাওয়ার মঞ্চে পরিনত হয়েছে৷ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত সংগঠন নানা ধরনের দাবি নিয়ে সমাবেশ করছে৷ এবার আসা যাক প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া তৃতীয় বিষয়ে৷ তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের কথা বলেছেন৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৬ জন বিচারপতির একসঙ্গে পদত্যাগের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি৷ বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থায় যে ‘চিড়' ধরেছিল, সেখানে কিভাবে মানুষের আস্থা ফিরবে? এখনো বিচার অঙ্গনে যা হচ্ছে, তাতে আস্থা ফেরার মতো কিছু দেখা যাচ্ছে না৷ তবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া প্রধান বিচারপতি তার সুদক্ষ নেতৃত্বে বিচার অঙ্গন পূর্ণগঠন করবেন বলে সবার আশা৷

বাংলাদেশে এই মুহুর্তে প্রথম যে কাজে হাত দেওয়া দরকার সেটা আইন -শৃঙ্খলা৷ যেটা প্রধান উপদেষ্টা তার সংস্কারের তালিকায় চার নম্বরে রেখেছেন৷ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতেই হবে৷ থানাগুলোতে কার্যক্রম শুরু হলেও রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলার কাজে, অর্থাৎ, অপারেশনাল কাজে পুলিশকে এখনও দেখা যাচ্ছে না৷ পুলিশ সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন৷ উর্ধ্বতন পর্যায়ে কয়েকজনকে অবসর দেওয়া হলেও সাধারণ পুলিশ সদস্যরা কাজে উদ্যম পাচ্ছেন না৷ তাদের মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করছে৷ আবার সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ছাত্রদের আন্দোলনে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে৷ এখন অধিকাংশই তো পুলিশের গুলিতে আহত বা নিহত হয়েছেন৷ তাহলে যারা মাঠে থেকে গুলি করেছেন, তারা তো চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন- কবে না তারা গ্রেপ্তার হন৷ একজন কনস্টেবল আলাপকালে বলছিলেন, ‘‘ওই আন্দোলনের সময় এমন একজন কনস্টেবলও পাওয়া যাবে না, তিনি গুলি করেননি৷ যারা মাঠে ডিউটিতে ছিলেন, তারা সবাই গুলি করেছেন৷ তাহলে কি সবাইকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠাবেন? আমাদের দোষ কী? অফিসারের নির্দেশ পালন করা আমাদের কর্তৃব্য, না হলে চাকরি থাকবে না৷ এখন নির্দেশ পালন করতে গিয়ে তো আমরা খুনের আসামি! অথচ বিগত সরকারের সময়ে তো আমরা কোনো সুবিধাভোগী না৷ দিন-রাত আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে৷ কিভাবে এখন আমরা মানুষের সামনে যাবো?’’

আবার আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব মন্ত্রী, এমপি বা অন্যদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের সবাইকেই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ সাংবাদিক দম্পতি শাকিল-রুপাকেও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে৷ ফলে পুলিশ এখনো সেই পুরনো ফরম্যাটেই আছে৷ এই বাহিনীকে কিভাবে সংস্কার করা হবে- সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ যারা দায়িত্বে আসছেন, তারাই বা কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন সেটাও দেখার বিষয়৷

আাদালতে নেয়ার সময় সাংবাদিক শাকিল আহমেদের সঙ্গে পুলিশের সদস্যরা
মামলা, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্র পুলিশ এখনো আগের রীতিতেই চলছেছবি: AFP

প্রধান উপদেষ্টা মিডিয়া সংস্কারের কথা বলেছেন৷ আমরা যেটা দেখছি, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী সাংবাদিকদের হাত থেকে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকরা মিডিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিচ্ছেন৷ সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা৷ অনেক মিডিয়া ভোল পাল্টে বিএনপি ও বর্তমান সরকারের তোষামোদিতে নেমেছে৷ বিগত সরকার যেমন আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে অনেকগুলো পত্রিকা ও টেলিভিশন বন্ধ করেছিল, বর্তমান সরকারের আমলে ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে একটি টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে৷ তাহলে কিভাবে হবে মিডিয়ার সংস্কার? অথচ আপনি যত সংস্কারই করেন না কেন, মিডিয়ার সংস্কার ছাড়া কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত টিকবে না৷ সব সাংবাদিক তো বিগত সরকারের তোষামোদি করেনি, তেলবাজি করেনি, সুবিধাও নেয়নি৷ নিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিক৷ তাদের দায় পড়েছে পুরো কমিউনিটির উপর৷ এখান থেকে তোষামদি ছাড়া কি সাংবাদিকতা বাংলাদেশে সম্ভব হবে? ইতিমধ্যে বিএনপির কয়েকজন নেতা ও ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক তো শাসিয়েই দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট গেলে তারা ছাড় দেবে না৷ তাহলে কিভাবে বদলাবে গণমাধ্যম!

বর্তমানে বিভিন্ন শীর্ষ পদগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আমরা দেখছি, এই পরিবর্তনের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কাজ যে শুরু হয়েছে, তা কিন্তু নয়৷ ফলে দীর্ঘ আকাঙ্খিত রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর সংস্কারের দাবির সাথে এসব পদত্যাগের সংযোগ কতটা রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়৷ কিন্তু বহু বছর ধরে যেভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কাজ করে আসছে তার বিপরীতে সংস্কারের ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের বাধা আসতে পারে? আর কিভাবেই বা রাষ্ট্র ও প্রশাসন সংস্কারের চ্যালেঞ্জ সামলাবে নতুন সরকার? সেটা বুঝতে হলে আরো অপেক্ষা করতে হবে৷ গত কয়েকদিন বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, নতুন সরকারের সামনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে দায়িত্ব পড়েছে তার পরিসর অনেক ব্যাপক৷ এক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত দিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এমন অনেক দিকই রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি আসছে৷ ব্যাংকিং খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে, যেভাবে টাকা পাচার হয়েছে, সেখানেও তো চ্যালেঞ্জ কম নয়৷ সুশাসন ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটা বড় আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, পুরো ব্যবস্থার খোলনলচে বদলানোর অনেক কিছুই সংবিধানের সাথে যুক্ত৷ আর কাঠামোগত দিক দিয়েও মানুষের আচরণ, রেগুলেশন বা প্রবিধান, নিয়ম-কানুন পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ বিষয়৷ সে সময়টা বেশি লাগলে- তখন মানুষের মধ্যে যেমন অধৈর্যের প্রবণতা তৈরি হতে পারে, একই সাথে রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো থেকেও চাপ তৈরি হতে থাকবে৷ ফলে কম সময়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার একটা চাপ বর্তমান সরকারের থাকবে৷ রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ মোকাবেলা করা এবং বিভিন্ন মতের মানুষকে একত্র করে সেগুলো সামাল দেওয়াটাও এই চ্যালেঞ্জের আরেকটা অংশ৷ ফলে সরকারকে চ্যালেঞ্জ উৎরাতেও চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে৷

কেমন আছেন আন্দোলনের আহতরা?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান