চেক প্রজাতন্ত্রের স্পা শহরের কথা
১৩ নভেম্বর ২০১৪বিশ্ব রাজনীতিতে কী ঘটছে না ঘটছে, তাতে কাটেরিনা প্লাচকোভা-র কিছু আসে যায় না৷ কিন্তু সেই বিশ্ব রাজনীতিই এ বছর কাটেরিনা-র ব্যবসা মাটি করতে চলেছে! চেক প্রজাতন্ত্র, এককালে চেকোস্লোভাকিয়া-র পৃথিবী-বিখ্যাত ‘স্পা' বা স্বাস্থ্য ফেরানোর জায়গা ছিল এই কার্লোভি ভারি, জার্মানরা যাকে বলেন কার্লসবাড৷ এখানে গরম কালটাই আসল টুরিস্ট সিজন৷ কাটেরিনা-কে এই টুরিস্ট সিজনে তাঁর দুই চতুষ্পদ সহচরী ফিনা আর লোনা-কে নিয়ে সারা বছরের কামাইটা করে নিতে হবে৷ অথচ এ বছর শহরটা যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ কাটেরিনা বললেন, ‘‘কার্লসবাড-কে আমি আর কখনো এমন খালি দেখিনি৷ আগে অবস্থা এর চাইতে অনেক ভালো ছিল; আর এখন যেন চরমে পৌঁছেছে৷ প্রায় কোনো খদ্দেরই নেই৷ রুশরাও আর আসে না৷ হয় তারা কোনো ভিসা পায় না – নয়তো জানি না, কী ঘটে থাকতে পারে৷''
‘রাশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের শহর'
এই সেদিনও কার্লোভি ভারি-কে বলা হতো রাশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের শহর৷ রুশিদের কার্লসবাড-প্রীতি শুরু হয় জার পিটার দ্য গ্রেট-এর আমলে৷ ১৭১১ সালে মহান পিটার এসেছিলেন কার্লসবাডে তাঁর শরীর সারাতে৷ ১৯৮৯ সালের পর রুশরা কোটি কোটি ডলার খরচ করে ভাঙাচোরা স্পা-শহরটিতে আবার পুরনো দিনের মতো ঝলমলে, চকচকে করে তোলে৷ কিন্তু ইউক্রেন সংকটের ফলে কার্লসবাডের ‘রুশ' দ্যুতি অনেকটা ম্লান হয়ে এসেছে – সেটা নগর প্রশাসনে গেলেও বোঝা যায়৷ নগর প্রশাসনের মুখপাত্র ইয়ান কোপাল শোনালেন, ‘‘১৯৬৮ সালে ‘প্রাগ বসন্তের' সময় রুশ ট্যাংক আর সৈন্যরা যখন চেকোশ্লাভাকিয়ায় ঢোকে, তখন থেকেই এ দেশে রুশদের সম্পর্কে মনোভাব খুব ভালো নয়৷ অনেকেই রুশদের সহ্য করতে পারত না৷ কিন্তু কার্লসবাডে তার কোনো রেশ ছিল না৷ ইউক্রেন সংকটের ফলে চেকদের রুশ ভীতি আবার ফিরে এসেছে, তারা আবার রুশদের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ৷''
‘কিন্তু আমার ক্রেডিট কার্ড?'
সংকট সত্ত্বেও যে সব রুশরা কার্লসবাডে এসেছেন, তাঁরা কিন্তু চেকদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ৷ অপরদিকে স্পষ্ট যে, ইউক্রেন সংকট যাবৎ রুশিরা দৃশ্যত ইউরোপে আসতে দ্বিধা করছে৷ কার্লসবাড-এর বহু সুদৃশ্য ফ্ল্যাট এখন ‘ফর সেল'৷ কোচোয়ান কাটেরিনা-র গাড়ির যাত্রী কমে গেছে৷ কাটেরিনা যে সব নামিদামি দোকানপাটের পাশ দিয়ে গাড়ি চালান, তাদেরও শাঁসালো খদ্দেরের সংখ্যা কমে গেছে৷ কাটেরিনা'র মন্তব্য: ‘‘এখানে মরসুম শুরু হয় মে মাসে – অক্টোবর অবধি সবকিছু ভর্তি থাকে৷ কিন্তু অবস্থা দেখলে মনে হবে, যেন এখনই হেমন্ত এসে গেছে৷''
কার্লসবাডের সেন্ট পিটার্সবার্গ হোটেলে এ বছর ৫০ শতাংশ কম অতিথি৷ রুশিদের ভয় হলো, ইউরোপে তাদের ক্রেডিট কার্ড আটকে দেওয়া হতে পারে৷ কার্লসবাড থেকে ইউক্রেন-রুশ সীমান্তের দূরত্ব তেইশ'শো কিলোমিটার – তা সত্ত্বেও সেই সংঘাতের অর্থনৈতিক ফলশ্রুতি কার্লোভি ভারি-তে দৃশ্যমান৷ হয়তো সংশ্লিষ্ট রাজনীতিকদের এই কার্লসবাডে কনফারেন্স করা উচিত – ঠাট্টা করে বলেন টুরিস্টরা৷
আদতে কার্লসবাড ছিল জার্মানদের স্পা, জার্মানদের স্বাস্থ্য ফেরানোর জায়গা৷ রুশদের আসা বন্ধ করলে হয়ত জার্মানরা আবার এখানে আসতে শুরু করবে – কাটেরিনা ও তাঁর পেশাগত সতীর্থদের সেটাই একমাত্র আশা৷