চীনের প্রতি অভিন্ন নীতি চায় ইইউ
১২ মে ২০২৩ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন ও তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক যে আগের মতো স্বাভাবিক ছন্দে চলতে পারে না, সে বিষয়ে ইউরোপে তেমন দ্বিমত নেই৷ তবে অন্যান্য সংকটের মতো এ ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়ে গেছে৷ সেই দুর্বলতা দূর করতে এবার পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ইইউ চীনের প্রতি অভিন্ন নীতি গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ চীনের উপর নির্ভরতা কমানো এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নিতে সে দেশকে উদ্বুদ্ধ করাই সেই উদ্যোগের মূলমন্ত্র৷ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেও এক যৌথ ঘোষণাপত্রে চীনকে একইসঙ্গে সহযোগী, প্রতিযোগী ও ‘সিস্টেম্যাটিক' প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বর্ণনা করেছিল ইইউ৷ তারপর থেকে প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের অবস্থান আরও কড়া হয়েছে বলে ইউরোপ মনে করছে৷
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে শুক্রবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীনের প্রতি অভিন্ন নীতির রূপরেখা স্থির করার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস স্বীকার করেন, যে চীনের তরফ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা বেড়ে চলায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তবে তিনি সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বদলে ‘স্মার্ট ডি-রিস্কিং' নীতির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ক্ষেত্রে ইউরোপের নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানান৷
ইইউ অবশ্য চীনের সঙ্গে সংঘাতের পথে এগোতে ভয় পাচ্ছে না৷ সম্প্রতি চীনের আটটি কোম্পানিকে উন্নত প্রযুক্তি রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ব্রাসেলস৷ ঘুরপথে সেই প্রযুক্তি মস্কোর হাতে চলে যেতে পারে বলে ইইউ সন্দেহ করছে৷ এমন পদক্ষেপের ফলে চীন তীব্র ক্ষোভ দেখিয়েছে৷ ইউরোপ সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গাং বেইজিং-এর তরফ থেকে ‘প্রয়োজনীয় জবাব' সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক তাঁকে সরাসরি বলেন, যে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রশ্নে চীনের ঘোষিত নিরপেক্ষতা কার্যত আগ্রাসী পক্ষের প্রতি সমর্থনের সমান৷
জার্মানিসহ ইউরোপের কিছু দেশ চীনের প্রতি আরও কড়া মনোভাব দেখালেও ইইউ-র অন্য সদস্যরা বেইজিং-কে চটাতে দ্বিধা দেখাচ্ছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত মাসে বেইজিং সফরের পর বলেন, তাইওয়ানের প্রশ্নে ইইউ-র পুরোপুরি মার্কিন নীতি অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই৷ সেই মন্তব্যের ফলে ইউরোপে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়৷ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটেরিন কোলোনা ‘বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা' বজায় রাখতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করেন৷
এমন ভিন্ন মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রতি ইইউ-র অভিন্ন নীতি যে সহজ হবে না, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ শুক্রবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকেও কোনো স্পষ্ট ফলের প্রত্যাশা রাখা হচ্ছে না৷ ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বরেল বৃহস্পতিবার বলেন, পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ চীন কীভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি৷ সেইসঙ্গে চীনের প্রশ্নে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সমন্বয় করতে চায় ইইউ৷ তাই শনিবার এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগর অঞ্চলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও ইইউ সতীর্থরা চীনের বিষয়ে আলোচনা করবেন৷
এসবি/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ)