1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংস্কারের আশা খুবই ক্ষীণ

মাটিয়াস ফন হাইন/এসবি১৬ নভেম্বর ২০১২

চীনের শীর্ষ নেতৃত্বে রদবদলের প্রস্তুতিপর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো৷ ডয়চে ভেলের চীনা বিভাগের প্রধান মাটিয়াস ফন হাইন মনে করেন, শীর্ষ স্তরে নতুন মুখ এলেও বড় রকমের সংস্কারের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ৷

https://p.dw.com/p/16k5U
ছবি: Reuters

অপেক্ষার পালা শেষ৷ কমিউনিস্ট পার্টির দলীয় অধিবেশনও শেষ হলো৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষে আসতে চলেছে নতুন নেতৃত্ব৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে আগামী এক দশক ধরে পরিচালনা করবেন নতুন নেতারা৷ মনে রাখতে হবে, চীনে এক দলীয় শাসনতন্ত্র বিরাজ করছে৷ কমিউনিস্ট পার্টি দেশকে কার্যত লুটে চলেছে৷ সেই প্রবণতায় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না, শুধু তার রকম-সকম বদলে যাবে৷

পূর্বসূরি হু জিনতাও'এর তুলনায় দলের নতুন নেতা শি চিনপিং বহির্বিশ্বের প্রতি অনেক খোলামেলা ও বেশ খোশমেজাজের মানুষ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ৫৯ বছর বয়স্ক এই নেতার কাছে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রত্যাশা করা যায় না৷ পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির দিকে তাকালেই এর কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ উল্লেখ্য, এবার কমিটির সদস্যসংখ্যা নয় থেকে কমিয়ে সাতে আনা হয়েছে৷ ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং'এর পরেই তৃতীয় স্থানে যাঁকে রাখা হয়েছে, সেই জাং দেজিয়াং উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ অন্যদিকে নেতৃত্বের এই মূল কেন্দ্রে এমন অনেককে রাখা হয় নি, যাঁদের সঙ্গে পশ্চিমা জগতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷ চীনের দক্ষিণে গুয়াংদং প্রদেশের সংস্কারপন্থী গভর্নর ওয়াং ইয়াং অথবা অ্যামেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক প্রধান লি ইউয়ানচাও এঁদের মধ্যে অন্যতম৷

Deutsche Welle Chinesische Redaktion Matthias von Hein
ডয়চে ভেলের চীনা বিভাগের প্রধান মাটিয়াস ফন হাইনছবি: DW

শি চিনপিং'এর হাতে অবশ্য অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ দলের শীর্ষ নেতা তো বটেই, সেইসঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় সামরিক কমিটির সভাপতিত্বও গ্রহণ করতে পারেন৷ তখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনীর রাশ চলে যাবে তাঁর হাতে৷ তুলনায় হু জিনতাও বছর দুয়েক পর সেই ক্ষমতা পেয়েছিলেন৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী মার্চ মাসে শি চিনপিং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন৷

শি চিনপিং'এর সামনে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে রয়েছে৷ নেতা হিসেবে প্রথম ভাষণে তিনি বেড়ে চলা দুর্নীতির উল্লেখ করেছেন৷ দলীয় সম্মেলনের ঠিক আগে ক্ষমতার শিখরে কিছু চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ বিশেষ করে চনচিং শহরের পার্টি প্রধান বো শিলাই'কে ঘিরে কেলেঙ্কারি মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লিউ জিজুন'ও এমনই এক দুর্নীতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ তার উপর মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে খোদ প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাও কম চাঞ্চল্যকর নয়৷ তাদের সূত্র অনুযায়ী বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ইউরো৷ শি চিনপিং'এর পরিবার নাকি ৩০০ কোটি ইউরো মূল্যের সম্পদ জমা করেছে৷ বলা বাহুল্য, শেষ দুটি দাবি চীনে পুরোপুরি সেন্সর করা হয়েছে৷

এই সব প্রতিবেদনের ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর তা হলো চীনের সমাজের মধ্যে ভাঙন বাড়ছে৷ প্রায় দুই দশক ধরে চীনে যে সামাজিক চুক্তি চালু আছে, তা আজ হুমকির মুখে৷ এই চুক্তি অনুযায়ী জনগণ রাজনৈতিক অধিকার চাইবে না৷ এর বদলে তাদের অর্থনৈতিক ফায়দা হবে৷ কিন্তু ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে একের পর এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের অসংখ্য ঘটনার ফলে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে৷ এমনকি খাদ্য নিরাপত্তার উপর আস্থাও আর নেই৷ গোটা দেশে বড় বড় প্রকল্পের কারণে চাষিদের উৎখাত করার ঘটনার ফলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভও বেড়ে চলেছে৷

হু জিনতাও দেশের সমস্যাগুলির সমাধানের লক্ষ্যে গত এক দশকে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেন নি৷ তার বদলে আরও কঠোর দমন নীতির পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি৷ ফলে সমালোচকরা তাঁর কার্যকালকে ‘হারানো দশক' হিসেব বর্ণনা করেন৷ এবার ক্ষমতার রাশ ধরছেন শি চিনপিং৷ তিনিও হয়ত রোগের মূল কারণ দূর করার বদলে রোগের উপশম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য