মৃত্যুর ধাক্কা সামলে উঠছে সুন্দরগঞ্জ থানা
৬ মার্চ ২০১৩গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর আহমেদকে অনেক কষ্টে পাওয়া গেল ফোনে৷ শুরুতে চার সহকর্মীসহ সাতজনের মৃত্যু এবং অনেকের আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কথা বলায় তাঁর অনিচ্ছাই ছিল বেশি৷ অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ তখনো হরতাল চলছে৷ ২৮ ফেব্রুয়ারির অভিজ্ঞতা তাঁকে নিশ্চিন্তে সাক্ষাৎকার দেয়ার উৎসাহ দেয় কী করে!
অপ্রিয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেও মঞ্জুর আহমেদ সঙ্গে সঙ্গেই সময় দিতে পারেননি৷ দাপ্তরিক কাজ গুছিয়ে যখন সময় দিতে পারবেন বললেন, তখন জানা গেল তিনি নামাজে৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির যখন ধ্বংসযজ্ঞে নামে, বাধা দেয়ায় তাঁদের দিকেও ছুটে আসে খুনে মেজাজে, অসহায় আত্মসমর্পণের পরও বাঁচতে না পারা চার পুলিশ সদস্যও হয়তো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো সেদিন হয়তো নামাজ পড়েছিলেন৷ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁদের প্রতিও কি ন্যূনতম মানবিক আচরণ করেছেন!
মঞ্জুর আহমেদের কাছে প্রথমে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপির ডাকা মঙ্গলবারের হরতালে সুন্দরগঞ্জের পরিস্থিতি৷ জানালেন, সব শান্ত, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি৷ প্রধান বিরোধী দলের হরতালে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, তাহলে সেদিন জামায়াত-শিবিরের বিক্ষোভ এত বিধ্বংসী হলো কেন, কী করে তারা এমন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পারলো? মঞ্জুর আহমেদ জবাবে যা জানালেন, তা এতদিনে অনেকেই জেনে গেছেন৷ আশপাশের এলাকায় জামায়াত-শিবিরের অনেক সমর্থক, মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছে শুনে দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে, চর থেকে এসে একত্র তারা হয়ে ঢুকে পড়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়৷
১০-১৫ হাজার লোক হঠাৎ ধংসযজ্ঞে নামার কারণেই সেদিন এমন হয়েছিল বলে মনে করেন মঞ্জুর আহমেদ৷ এত লোক এসে ঘিরে ফেলায় মাত্র ১০-১৫ জন পুলিশ যে শট গানের গুলি ছুড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন সে কথাও জানালেন৷ ছোট্ট থানার অল্প কয়েকজন পুলিশ এ যুগে ১০-১৫ হাজার মানুষের মুখোমুখিও দাঁড়াতে হয়তো পারে, কিন্তু গুলি ফুরিয়ে গেলে? তা-ই হয়েছিল সেদিন৷ সে অবস্থায় যাঁরা পালাতে পেরেছেন, প্রাণে বেঁচেছেন, যাঁরা পারেননি, প্রাণভিক্ষা চেয়েও কাজ হয়নি, মর্মান্তিক মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে তাঁদের!
সুন্দরগঞ্জ আপাতত শান্ত৷ ধ্বংসলীলা চলছে না বলে, মানুষের নিথর, রক্তাক্ত দেহ দেখতে মরিয়া কিছু মানুষ তেড়েফুঁড়ে আসছে না বলে, নামকে সার্থক করে সুন্দরগঞ্জের প্রকৃতিও আবার ফিরে পাচ্ছে স্বাভাবিক সৌন্দর্য৷ কয়েক দিন আগের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা ভুলে বা মনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাঁর থানা কি এখন প্রস্তুত? প্রস্তুতির ঘাটতি নেই জানালেও ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মঞ্জুর আহমেদ বললেন, ‘‘লোকবল বাড়ানো উচিত, সবার আবাসনের ব্যবস্থা করা উচিত আর থানার নিরাপত্তার দিকটাও ভাবা উচিত৷''
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন