1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাপের মুখে যোগী শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি মানলেন

১১ জুন ২০২১

প্রবল চাপের মুখে যোগী আদিত্যনাথ। আর সেই চাপটা তৈরি করেছেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা এবং দলের বিধায়করা।

https://p.dw.com/p/3ukBl
যোগী আদিত্যনাথ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance

যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলে তার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। সম্ভবত সেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে  বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি মেনে নিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সূত্র জানাচ্ছে, দবি মেনে নেয়ায় তাকে সরাবার বিষয়ে দলও আর এগোবে না। বিনিময়ে উত্তর প্রদেশে দলের সব নেতাকে নিয়ে, তাদের তুষ্ট করে চলবেন যোগী আদিত্যনাথ।

যোগী আদিত্যনাথকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাবার উদ্যোগ নিয়ে সরগরম ছিল বিজেপি। করোনা মোকাবিলার ব্যর্থতা নিয়ে উত্তর প্রদেশে মানুষের মনে প্রবল ক্ষোভ রয়েছে। যোগীর বিরুদ্ধে বিজেপি নেতাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, তিনি সব কাজে নিজের জাত ঠাকুরদের প্রাধান্য দেন। ব্রাহ্মণ থেকে শুরু করে অনগ্রসররা তাই যোগীর উপর খাপ্পা। উন্নয়নের কাজও তিনি বিশেষ করেননি। সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে তিনি দেখা পর্যন্ত করেন না। তাদের কোনো পদ দেন না।

এমনকী তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথাও শুনছিলেন না। মোদীর পছন্দের আইএএস অফিসার এ কে শর্মা চাকরি থেকে অকাল অবসর নিয়েছিলেন। মোদী তাকে আগে বিধান পরিষদের সদস্য ও পরে মন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যোগী তাকে আমলই দেননি। শর্মা ফিরে এসে মোদীকে সব জানিয়েছিলেন। মোদী-শাহ রাজ্য সভাপতিকে বদল করতে চাইলেও যোগী রাজি হচ্ছিলেন না।

যোগীকে নিয়ে উত্তর প্রদেশে দলে ঝামেলা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, মোদী-শাহ বুঝতে পারেন, এই অবস্থায় আর মাস সাত-আট পরের বিধানসভা নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবিই সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন।

এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে উত্তর প্রদেশ নিয়ে একের পর এক বৈঠক করেছেন বিজেপি নেতারা। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও বিজেপি ও আরএসএসের প্রধান নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়। তারপর আরএসএস ঘনিষ্ঠ বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ লখনউ গিয়ে দলের সব বিধায়ক, সাংসদ, পদাধিকারীর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, অধিকাংশ বিধায়ক যোগীকে সরিয়ে দিতে বলেন। 

এই অবস্থায় যোগীকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার তিনি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন, দেড়ঘণ্টা বৈঠক হয়। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সত্তর মিনিট বৈঠক শেষে তিনি দেখা করেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে। দুই ঘণ্টা ধরে তারা আলোচনা করেন।  বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, তিনি প্রায় সব দাবিই মেনে নেন। এরপর মন্ত্রিসভার রদবদল হতে পারে, সেখানে শরিক সহ বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ নেতারা সামিল হতে পারেন। এখনো মন্ত্রিসভায় আরো ১৮ জনকে নিতে পারবেন যোগী।

এছাড়া সরকারি বিভিন্ন কর্পোরেশন, কমিটি ফাঁকা আছে। সেগুলি পূরণ করা হবে। এ পি শর্মাকেও যথাযোগ্য সম্মান ও দায়িত্ব দেওয়া হবে। বদল করা হতে পারে রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে। সেখানে উপ মুখ্যমন্ত্রী ও সাবেক সভাপতি  কেশব প্রসাদ মৌর্যকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। আর বিজেপি নেতারা একজোট হয়ে নির্বাচনে নামবেন। আর নির্বাচনী কৌশল সহ সব বিষয়ে শেষ কথা বলবেন অমিত শাহ।

ঘটনা হলো, পশ্চিমবঙ্গে ভোটে হারের ধাক্কার পর উত্তর প্রদেশে হারের মুখ দেখতে চাইছেন না বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই যোগীকে চাপে রাখা হলো। প্রশ্ন হলো, যোগী কেন মানলেন? প্রবীণ সাংবাদিক এবং উত্তর প্রদেশ বিশেষজ্ঞ শরদ গুপ্তার মতে যোগীর সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ''সিংহভাগ বিধায়ক যোগীর বিরুদ্ধে দলের নেতৃত্বের কাছে নালিশ করেছেন। আর মাস সাতেক পরে ভোট। তার আগে যৌগীকে সরিয়ে দিলো, তার অবস্থাও উমা ভারতী বা কল্যাণ সিংয়ের মতো হত।'' শরদের মতে, ''যোগীর বয়স কম। তার সামনে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পড়ে আছে। তাই তিনি বিদ্রোহের ধ্বজা তোলেননি।'' 

শরদ মনে করেন, ''যোগীকেও বিজেপি-র দরকার। তাকে সরিয়ে দিয়ে উত্তর প্রদেশ জেতা মুশকিল। আর তিনি নিজেকে হিন্দুত্বের মুখ হিসাবে তুলে ধরেছেন। ফলে তাকে সরিয়ে দিলে মাস সাতেক পরে তিন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজেপি ধাক্কা খেতে পারত। সেই ঝুঁকিটা নিতে চাননি বিজেপি নেতৃত্বও। তারা যোগীর উপর চাপ দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে চেয়েছেন।''