চলনবিলে স্কুল যায় শিক্ষার্থীর কাছে
৬ আগস্ট ২০১০বলছি নাটোরের চলনবিল সংলগ্ন দুর্গম এলাকার কথা৷ এখানে নৌকায় তৈরি করা হয়েছে বিদ্যালয়, পাঠাগার এমনকি ইন্টারনেট ক্যাফেও৷ শিশু কিশোররা এসব নৌকায় চড়ে প্রাথমিক শিক্ষা নেয়, বই পড়ে আর ইন্টারনেটের ব্যবহারতো রয়েছেই৷
পানিতেই বাস
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এই শতকের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের অন্তত ১৮ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে৷ গৃহহীন হবে কমপক্ষে ৩০ মিলিয়ন মানুষ৷ তাই, পানিতে বেঁচে থাকার নানা উপায় নিয়ে গবেষণা চলছে এদেশে৷ এমনই এক তরুণ গবেষক মোহাম্মদ রেজওয়ান৷ বেসরকারি সাহায্য সংস্থা সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার কর্নধার তিনি৷ নিজের উদ্যোগে তৈরি করছেন একের পর এক নৌকা-স্কুল৷ এসব ভাসমান বিদ্যালয়ে সপ্তাহে ৬ দিন গড়ে চারঘন্টারও বেশি সময় লেখাপড়া করে শিক্ষার্থীরা৷ অনেকে বাড়ির ঘাট থেকেই নৌকায় ওঠে৷
রেজওয়ান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো দিনে দিনে বড় হচ্ছে৷ কারন নদীর ভাঙন বাড়ছে৷ তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরির্বতনের সঙ্গে খাপ খাওয়ার নানা উপায় ভাবতে হচ্ছে আমাদেরকে৷
তিনি বলেন, ‘‘নৌকায় স্কুল, লাইব্রেরি বা ট্রেনিং সেন্টার তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের সফল মডেল রয়েছে৷''
পুরোটাই ক্লাসরুম
নৌকা-স্কুলের পুরোটা জুড়েই ক্লাসরুম৷ অন্তত জনাত্রিশেক শিক্ষার্থী একত্রে বসতে পারে সেখানে৷ শিক্ষক ছাড়াও তাদের জন্য রয়েছে মাল্টিমিডিয়া শিক্ষার ব্যবস্থা৷ কম্পিউটার ব্যবহার করেও নানা বিষয় সেখানো হয় তাদের৷ জানতে চান, নৌকার মধ্যে কম্পিউটার চলে কীভাবে? কিভাবেই বা জ্বলে লাইট বাল্ব?
উত্তরটা সোজা৷ নৌকা-স্কুলের ছাদেই বসানো আছে সোলার প্যানেল, সেই প্যানেল চার্জ করে কয়েকটি ব্যাটারিকে৷ এসব ব্যাটারি শক্তির মূল উৎস৷
শিক্ষার্থীদের কথা
এমন নৌকা-স্কুলের শিক্ষার্থী ওয়াসীম এর কথায়, কলম, বই - সবই বিনা খরচায় পাই আমরা৷ তাই এই বিদ্যালয়ে যেতে আমাদের কিছুই কিনতে হয়না৷
অপর এক শিক্ষার্থী জানালেন, আমাদের দেশে দুই থেকে তিনবার বন্যা হয়৷ বন্যার সময় অন্যান্য স্কুল ডুবে যায়৷ নৌকা স্কুল ডোবে না৷
নৌকা-স্কুলই ভরসা
নৌকা-স্কুলের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন মধুসুদন কর্মকার৷ তিনি বলেন, বর্ষাকালে চলনবিল এলাকায় স্কুলে যাওয়া বড় কঠিন কাজ৷ কেননা রাস্তাঘাটে পানি উঠে যায়৷ চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে অনেক এলাকা৷ তাই, নৌকা-স্কুলই ভরসা অনেকের জন্য৷
পাঠাগার, ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার
শুধু নৌকা-স্কুলের কথাই বা বলছি কেন৷ রয়েছে নৌকায় পাঠাগার, ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার৷ এমনই এক পাঠাগারের নিয়মিত শিক্ষার্থী হাসিনুর রহমান৷ তাঁর কথায়, আমাদের গ্রামে নৌকা পাঠাগার আসার আগে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতো না৷
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
সিধুলাই এর উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা চলছে দেশী বিদেশী সংবাদমাধ্যমে৷ সিএনএন থেকে শুরু করে গার্ডিয়ান পর্যন্ত প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই খবরকে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে৷ ইতিমধ্যে এই সংস্থা কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে গেটস ফাউন্ডেশনের পুরস্কার, সাসাকা এওয়ার্ড, ইন্টেল পরিবেশ এওয়ার্ডসহ বেশকিছু সম্মাননা৷
সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা চলনবিল সংলগ্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন শিক্ষা দেবারও চেষ্টা করে৷ তবে, তাদের মূল উদ্দেশ্য নৌকা স্কুল৷ সংস্থাটি চায়, চলনবিলের এক লাখ আশি হাজার শিশু কিশোরকে নৌকায় শিক্ষা দিতে৷ এজন্য চাই আরো নৌকা, আর্থিক সহায়তা৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন