চট্টগ্রামে ভিআইপি প্রার্থীদের অর্ধেকই ধরাশায়ী হতে পারেন
১৯ ডিসেম্বর ২০০৮বিভিন্ন সময় সরকারী দলের নেতা হিসেবে এলাকার মানুষের ওপর তারা চালিয়েছেন জুলুম-নির্যাতন৷ অনেকেই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও এলাকায় আসেন না৷ এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দলও রয়েছে৷ এই ধরনের প্রার্থীদের দিক থেকে এবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ভোটাররা৷ তাই শেষ মুহুর্তে নিজের আসনে জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এসব ভিআইপি প্রার্থী৷ তার জন্য খরচ করছেন বস্তা বস্তা টাকা আর কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে৷
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ১৩ জন ভিআইপি প্রার্থী রয়েছেন৷ এদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসন থেকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৬ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৪ (হাটহাজারী) আসনে আছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ৷ চট্টগ্রাম-৫ আসনে (রাউজান) আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দি আরেক ভিআইপি গিয়াস কাদের চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৭ (চন্দনগাঁ-বোয়ালখালী) আসনে মহাঐক্যজোট প্রার্থী জাসদের কার্যকারী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল৷ চট্টগ্রাম-৮ (কোতয়ালি) আসনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি, চট্টগ্রাম-৯ (ডাবলমুরিং) আসনে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১০ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (আনোয়ারা) আসনে আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও তার প্রতিদ্বন্দি বিএনপির সারওয়ার জামাল নিজাম, চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া) এলডিপি প্রধান কর্ণেল অলি আহমেদ (অব.) বীর বিক্রম ও চট্টগ্রাম-১৫ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী৷
চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের জন্য নির্বাচনী মাঠ নিষ্কন্টক নয়৷ তার কাঁধের ওপর নিশ্বাস ফেলছেন বিএনপির এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী৷ ইঞ্জিনিয়ার মোশারফকে জিততে হলে প্রচন্ড কষ্ট করতে হবে৷ এমনকি তিনি ধরাশায়ীও হতে পারেন এমনটি মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা৷ চট্টগ্রাম-২ আসনটিতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও জিতেছিল আওয়ামী লীগের রফিকুল আনোয়ার৷ এবার ভিআইপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম৷ তিনি সাকা চৌধুরীকে ছেড়ে কথা বলার লোক নন৷ তাই ভোটের হিসাব পেতে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ চট্টগ্রাম-৪ আসনে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের প্রতিপক্ষ বিএনপির ওয়াহিদুল আলম৷ এখন পর্যন্ত নির্বাচনী হিসাবে ওয়াহিদুল আলমই এগিয়ে আছেন৷ আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে জিততে হলে আরো বেশি ভোটারদের কাছে যেতে হবে৷ তার পক্ষে মাঠে নামাতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের৷
চট্টগ্রাম-৫ আসনে নির্বাচন করছেন দুই জোটের দুই ভিআইপি প্রার্থী একই চৌধুরী পরিবারের আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর ও বিএনপির গিয়াস কাদের চৌধুরী৷ ২০০১ সালের নির্বাচনে ফজলে করিম চৌধুরী জিতেছিলেন৷ এবারও তার অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো৷ সেক্ষেত্রে ধরাশায়ী হতে পারেন গিয়াস কাদের চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৬ আসনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ড. হাসান মাহমুদ৷ ক্লিন ইমেজের অধিকারী হাসান মাহমুদের কাছে এবার ধরা খেয়ে যেতে পারেন আলোচিত নেতা সাকা চৌধুরী৷ চট্টগ্রাম-৭ আসনে মহাঐক্যজোট প্রার্থী জাসদের কার্যকারী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল টাকায়ালা প্রার্থী বিএনপির এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে প্রচারণায় এখনও পিছিয়ে৷ তাকে জিততে হলে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঠে নামাতে হবে, খরচ করতে হবে টাকাও৷ চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসির প্রতিপক্ষ আরেক শিল্পপতি বিএনপির শামসুল আলম৷ আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র মহিউদ্দিন শামসুল আলমের পক্ষে৷ তাকে জিততে হলে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে ঘাম ঝরাতে হবে৷ শেষ পর্যন্ত হয়ত তিনি বের হয়ে যাবেন৷
চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান ভালো অবস্থানে থাকলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আফসারুল আমিনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন মেয়র মহিউদ্দিন৷ ফলে নোমানকে বেগ পেতে হচ্ছে৷ চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভালো অবস্থানে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের এম এ লতিফও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন৷ চট্টগ্রাম-১২ আসনে বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজামের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক ভিআইপি আওয়ামী লীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু৷ বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যার ইস্যুতে নিজাম বেশ খানিকটা বেকায়দায়৷ চট্টগ্রাম-১৩ ও ১৪ আসনে এলডিপির কর্ণেল অলি আহমেদকে অনেকটাই বেগ পেতে হবে৷ একদিকে জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী ও অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা৷ তাই দু'টি আসনই তার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে৷ চট্টগ্রাম-১৫ আসনে সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরীও বাঁশখালীর একটি হিন্দু পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে মারা ইস্যুতে বেশ খানিকটা বেকায়দায়৷ তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের শিল্পপতি সুলতান উল কবীর চৌধুরী প্রচারণায়ও এগিয়ে আছেন৷ সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের ভিআইপি প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে৷ ধরাশায়ীও হতে পারেন কমপক্ষে অর্ধেক ভিআইপি প্রার্থী এমন ধারণা রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের৷