চকচকে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে সেপসিস শনাক্তকরণ
২০ ডিসেম্বর ২০১১সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার ধরনটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই এক রকম৷ ব্যাকটেরিয়াগুলি শরীরের ছোট এক জায়গা সংক্রমিত করে, যেমন অপারেশন করা কোনো হাড়, ফুসফুস বা হার্টের ভাল্ভ৷ তারপর সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে৷ ধ্বংস করে হাড়গোড় ও দেহকোষ৷ শেষ পর্যন্ত জীবনবিপন্নকারী হয়ে উঠতে পারে এই দূষণ৷ অথচ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সহজেই দমন করা যায় সেপসিস৷ এই প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটলান্টার জর্জিয়া টেকনোলজি অব ইন্সটিটিউটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর নীরেন মূর্তি বলেন, ‘‘কোনো রোগী হয়তো খুব বেশি জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন৷ কিন্তু ডাক্তারের পক্ষে তাঁর জ্বরের আসল কারণটি শনাক্ত করা বেশ শক্ত৷ ব্যাকটেরিয়ার কারণে জ্বর হয়ে থাকলে, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিত্সক রোগীকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকও দেননা৷''
ছড়িয়ে পড়ার আগেই শনাক্তকরণ
গবেষক মূর্তি ও তাঁর টিম চিকিত্সার সুবিধার জন্য ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই চিহ্নিত করতে চান৷ তাঁরা এক ধরনের কনট্রাস্ট দ্রব্য বের করেছেন, যার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াগুলি ঝকমকে হয়ে দেখা যায়৷ ইঁদুরের ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এই পদ্ধতির সাফল্য দেখা গেছে৷ নীরেন মূর্তির ভাষায়, ‘‘আমাদের আশা, রোগী একটু অসুস্থ বোধ করলেই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব৷ প্রথম অবস্থায় ব্যাকটেরিয়াকে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা দমন করাও সহজ৷ এছাড়া ব্যাকটেরিয়ারা শরীরের কোথায় আস্তানা গেড়েছে, তা বুঝতে পারলে ডাক্তাররা অপারেশন করে জায়গাটি সহজে কেটে ফেলতে পারেন৷''
কনট্রাস্ট দ্রব্যটি মালটোডেক্সট্রিন থেকে তৈরি৷ খেলোয়াড়দের খাদ্যতালিকায় এটা সম্পূরক হিসাবে পরিচিত৷ বলা যায় বিশেষ আকারে গ্লুকোজের এক প্যাকেজ৷ ব্যাকটেরিয়াদের প্রিয় খাবার৷ গবেষকরা মালটোডেক্সট্রিনকে এক ধরনের চকমকে রঙের সঙ্গে মেশান৷ ব্যকটেরিয়ারা রঙসহ তা খেয়ে ফেলে৷ এ ক্ষেত্রে বিশেষত্ব হল এই যে, শুধু ব্যাকটেরিয়ারাই দ্রব্যটি গলাধঃকরণ করতে পারে শরীরের কোষে তা ঢোকেনা৷ মূর্তির মতে, কনট্রাস্ট দ্রব্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে৷ তিনি জানান, প্রথমে ‘‘আমরা ইঁদুরের উরুতে ই-কোলি ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে সংক্রমিত করেছি৷ তারপর কনট্রাস্ট দ্রব্য ইনজেকশন করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে লক্ষ্য করেছি যে, ব্যাকটেরিয়াগুলিকে ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে৷''
ছবিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সংক্রমণ
গবেষণাগারের ছবিতে লক্ষ্য করা যায়, পরীক্ষার জন্য অচেতন করা ইঁদুরের বাঁ পায়ে উজ্জ্বল লাল দাগ৷ মূর্তি বলেন, ‘‘এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, লাল দাগটায় ব্যাকটেরিয়ারা বসে আছে৷ অন্য জায়গাগুলি অন্ধকার৷''
মানুষের ক্ষেত্রেও এই ভাবে ব্যাকটেরিয়ার ক্ষুদ্র সংক্রমণ নির্ণয় করা সম্ভব, এক ধরনের টোমোগ্রাফির মাধ্যমে৷ এতে একটি স্ক্যানার সারা শরীরের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে দেহের বিভিন্ন স্তরকে দর্শনীয় করে তুলতে পারে৷ এজন্য কনট্রাস্ট দ্রব্যকে একটু পরিবর্তন করা প্রয়োজন৷ উজ্বল রঙের জন্য এখন যে পদার্থ ব্যবহৃত হয়, তার বদলে অন্য আরেক পদার্থ প্রয়োগ করা হবে, যাতে স্ক্যানার তা চিহ্নিত করতে পারে৷ নীরেন মূর্তি জানান, ‘‘আমাদের এজন্য পশু ও মানুষের ওপর আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে৷ আমি আশা করি এই কনট্রাস্ট পদার্থটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাজারে আসবে৷''
মূর্তি ও তাঁর সহকর্মীরা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনাও করছেন৷ মালটোডেক্সট্রিন শুধু ব্যাকটেরিয়ার ভেতরেই প্রবেশ করিয়ে ক্ষান্ত দিতে চাননা তাঁরা৷ অ্যান্টিবায়োটিকও ঢুকিয়ে দিতে চান ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে, যাতে সহজেই দমন করা যায় এগুলিকে৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক