ঘুমের জন্য ওষুধ নয়, দুধ
২২ নভেম্বর ২০১০জার্মানির দক্ষিণে মিউনিখ শহরের একটি কোম্পানি বাজারে এনেছে মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধ৷ বলা হচ্ছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম এক গ্লাস দুধ খেলে রাতে খুব ভাল ঘুম হবে৷ আর মনে হয় ঠিক এর জন্যই অপেক্ষা করে ছিল জার্মানির হাজার হাজার মানুষ৷ কারণ, ‘রাতে ঘুম হয়নি বা খাটা-খাটনি বেশি যাচ্ছে৷ রেস্ট নেওয়ার সময় পাচ্ছি না' - এ ধরণের অভিযোগ সারাক্ষণই শোনা যাচ্ছে৷ সেই সমস্যা সামাধানে এগিয়ে এসেছে মিউনিখের একটি কোম্পানি৷
বাভারিয়া অঞ্চলের সবুজ মাঠ, উঁচু-নিচু পাহাড় আর ফাঁকে-ফাঁকে অসংখ্য খামার – এ দৃশ্য কমবেশি সবার কাছেই পরিচিত৷ গরু চড়ে বেড়াচ্ছে, হাঁস-মুরগি ছোটাছুটি করছে – খামার বাড়িগুলোতে এ দৃশ্য দেখা স্বাভাবিক৷ অনেকেই ছুটি কাটাতে চলে যান গ্রামের এই স্নিগ্ধ-কোমল পরিবেশে৷ আর ইদানিং এখানেই হানা দিচ্ছে নানা ধরণের খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানি৷ এর মধ্যে একটি কোম্পানি গবেষণা করে জানিয়েছে, দুধে মেলাটোনিনের পরিমাণ বেশি থাকলে সেই দুধ পান করার পর খুব ভাল ঘুম হবে৷ প্রায় ছয় মাস ধরে চলে এই গবেষণা৷ এরপর বাজারে আসে ‘নাখট মিলশ ক্রিস্টালে' অর্থাৎ নাইট মিল্ক ক্রিস্টাল কোম্পানির মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এই দুধ রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে জার্মানি৷ অস্ট্রিয়ার বাজারে এই দুধ পাওয়া যাচ্ছে৷ কাই ওপেল ‘নাখট মিল্শ ক্রিস্টাল' কোম্পানির মুখপাত্র৷ তিনি জানান, ‘‘প্রতিটি প্রাণী এমনকি মানুষের মধ্যেও মেলাটোনিনের উপাদান রয়েছে৷ এই মেলাটোনিনই দিন এবং রাতের সাইকেলকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ প্রাকৃতিক ছন্দটাকে ধরে রাখে৷''
মেলাটোনিন সমৃদ্ধ ট্যাবলেট অনেক আগে থেকেই অ্যামেরিকায় বিক্রি হচ্ছে৷ বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে যে কেউই তা কিনতে পারে৷ এছাড়া মেলাটোনিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরণের সফ্ট ড্রিঙ্কও সেখানে পাওয়া যায়৷ তবে ইউরোপে মেলাটোনিন এত সহজলভ্য নয়৷ এখানে যত্রতত্র তা বিক্রি করা বৈধ নয়৷ অ্যামেরিকার ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনস্ট্রেশন নতুন করে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে৷
বাস্তব সত্য হল যে সব দুধ আমরা বাজার থেকে কিনি সেগুলোতে মেলাটোনিনের পরিমাণ একেবারেই নেই৷ যদি তাই হত তাহলে দেখা যেত সকালের নাস্তার টেবিলেই মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধ খেয়ে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই৷ তাই এসব দুধ থেকে মেলাটোনিন একেবারে সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ রাতে পান করার জন্য দুধে মেলাটোনিনের উপাদান যোগের প্রশ্ন এখানেই এসেছে৷ আলোর সংস্পর্শে মেলাটোনিন নষ্ট হয়ে যায়৷ আলো থেকে তাই দুধ দূরে রাখতে হবে৷ কাই ওপেল আরো জানান, ‘‘গরুর দিনের বেলা প্রচুর আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু রাতে একেবারেই না৷ সাধারণত দেখা যায় গরুর গোয়াল ঘরেও সারারাত হালকা বাতি জ্বলছে৷ এ কারণেই দুধে মেলাটোনিনের পরিমাণ কম, মেলোটোনিনের পরিমাণ গরুর রক্তেও কম৷ আমরা যা করেছি তা হল, গোয়াল ঘর থেকে আলো একেবারে সরিয়ে নিয়েছি৷ এক ধরণের অত্যন্ত হালকা লাল আলো শুধু জ্বলছে৷ এই আলো কোনো ক্ষতি করবে না৷ মেলাটোনিন উৎপাদনে কোনো সমস্যা হবে না৷''
তবে সবাই ‘মেলাটোনিন'-এর যুক্তি গ্রহণ করতে নারাজ৷ ইংল্যান্ডের লফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান জিম লোর্ন মেলাটোনিনের এই চমকপ্রদ তথ্য মেনে নিতে পারছেন না৷ তাঁর প্রশ্ন একটি গরু যদি সারারাত আলোর দিকে তাকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে মেলাটোনিন কীভাবে উৎপন্ন হবে? জিম সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘মেলাটোনিন ঘুমে সহায়তা করে না৷ এটা শুধু শরীরকে মনে করিয়ে দিতে পারে এখন রাত বা এখন দিন৷ এখন জেগে থাকা যায় বা এখন ঘুমাবার সময়৷ শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়িকে সময়মত চলতে মেলাটোনিন সাহায্য করে৷ কিন্তু কোনো নিশাচর প্রাণীকে কোনো অবস্থাতেই রাতে ঘুম পাড়ানো যাবে না৷ এসব প্রাণীর মেলাটোনিন কাজ করে অন্যভাবে৷ মেলাটোনিন কীভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে তা আমি এখনো বুঝতে পারছি না৷''
তবে একটি কথা সত্যি তা হল অন্য সাধারণ দুধের চেয়ে মেলাটোনিন সমৃদ্ধ দুধের দাম অনেক বেশি৷ অনেকেই বলছে, ঘুমের জন্য কোনো ওষুধ বা দুধ চাই না, চাই মানসিক প্রশান্তি৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক