গ্রিসে পোশাক কারখানা গড়ে তুলছেন বাংলাদেশিরা
২৬ আগস্ট ২০২২তবে ইউরোপের দেশ গ্রিসে দেখা গেল কারখানা গড়ে তুলে পোশাক উৎপাদন করছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা৷
২৭ বছর আগে ইউরোপের দেশ গ্রিসে এসেছেন বাংলাদেশি অভিবাসী নুরুল আমিন দেওয়ান৷ আসার পর কয়েক বছর এখানে কাজ করেছেন তিনি৷ এরপর তার মাথায় আসে পোশাক কারখানা গড়ে তোলার ভাবনা৷
সেই ভাবনা থেকেই তিনি নেমে পড়লেন কাজে৷ গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে গড়ে তুললেন ফিমা ফ্যাশনস নামে একটি পোশাক কারখানা৷
‘‘২৭ বছর আগে আমি গ্রিসে এসেছি৷ এরপর নিজের পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি এই কারখানাটি’’ বলেন নুরুল আমিন দেওয়ান৷
নুরুল আমিনের এই কারখানাটিতে বর্তমানে প্রায় দেড়শ শ্রমিক কাজ করেন৷ তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি৷
কারখানা পরিদর্শন করে দেখা গেল সারি সারি মেশিন৷ সেসব মেশিনে দল বেঁধে পোশাক সেলাইয়ের কাজ করছেন শ্রমিকেরা৷
জানা গেছে, শুধু নুরুল আমিন নন, গ্রিসে এমন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসীই ছোট ও মাঝারি আকারের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছেন৷ আর সেই ফ্যাক্টরিগুলোতে কর্মরতদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি৷ বর্তমানে ওই পোশাক কারখানাগুলোয় বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কমরত আছেন৷
নুরুল আমিন জানান, ইউরোপের ক্রেতাদের অনেকেই আগে চীন কিংবা ভিয়েতনামে কার্যাদেশ দিতেন, এখন তারা গ্রিসের এসব কারখানা থেকে পোশাক কিনতে চাইছে৷ এ কারণে এই কারখানাগুলোতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে কাজের চাপ৷ ফলে বাড়ছে শ্রমিকের চাহিদাও৷
তার মতে, গ্রিসের বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোতে এই মুহূর্তে ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মীর ঘাটতি রয়েছে৷
এদিকে এমন কারখানা গড়ে উঠায় বাংলাদেশ থেকে আসা যেসব শ্রমিক গ্রিসের কৃষিখাতে কাজ করছেন তাদের জন্যও একটি বাড়তি সুযোগ তৈরি হয়েছে৷
কৃষিজমিতে সারা বছর কাজ থাকে না আর তাই কৃষিখাতে কর্মরতদের অনেকেই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এসব কারখানায় কাজ করতে আসেন৷
তাছাড়া কারখানার কাজে অন্যান্য খাতের তুলনায় আয়ও ভালো বলে জানা গেছে৷
সাত বছর ধরে গ্রিসে আছেন বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ আসিফ৷ বর্তমানে তিনি নুরুল আমিনের পোশাক কারখানায় কর্মরত৷
তিনি জানান, দৈনিক ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করে তার মাসিক আয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা৷ চলাফেরা বাবদ তার মাসিক খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আর বাকি টাকা তার সঞ্চয় হয়৷
পাসপোর্ট না পেয়ে সংকটে অনেক বাংলাদেশি
বছরের পর বছর ধরে গ্রিসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকেই ভুগছেন বৈধ কাগজপত্রের সংকটে৷ দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তাদের৷
এথেন্সের ফিমা ফ্যাশনস নামের পোশাক কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
দুই বছর ধরে পোশাক কারখানাটিতে কাজ করেন বাংলাদেশের অভিবাসী আলমগির হোসেন৷ তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে৷
আলমগিরের অভিযোগ, নতুন পাসপোর্টের জন্য বাংলাদেশে দূতাবাসে আবেদন করে তিনি মাসের পর মাস ধরে ঘুরছেন৷
‘‘দুই বছর ধরে পাসপোর্টের জন্য ঘুরতেছি আমি৷ না আমার আবেদন জমা হইতাছে, না আমার কিছু হইতাছে৷ আমি জমা দিয়া আসছি দরখাস্ত, সেই দরখাস্ত হারায়ে ফেলছে৷ এখন আমি আবার দরখাস্ত জমা দিয়ে আসছি৷ এখন বলছে, আপনি অপেক্ষা করেন৷’’
আলমগিরের অভিযোগ, পাসপোর্ট না থাকায় তিনি দেশেও টাকা পাঠাতে পারছেন না৷ সেইসাথে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় তো আছেই৷ আর পাসপোর্ট না থাকায় দেশেও যেতে পারছেন না তিনি৷
পাসপোর্ট পেতে গিয়ে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিড়ম্বনার অভিযোগের বিষয়টি নাকচ করে দেননি গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ৷
তবে তিনি জানান, এ বিষয়ে দূতাবাসের কিছু করার নেই কেননা পাসপোর্ট বাংলাদেশ থেকে প্রদান করা হয়৷