গ্রিসে তেমন অগ্রগতি হয়নি
২৯ নভেম্বর ২০১৪গত এপ্রিল মাসেই গ্রিসের সরকার খোলা বাজারে আবার ঋণ নেবার সাহস দেখিয়েছিল৷ বছরের তৃতীয় ভাগে সে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিলো গোটা ইউরো এলাকার অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি৷ এমনকি চলতি বছর বেকারত্বের হারও কিছুটা কমেছে৷ কিছুদিন আগে পর্যন্ত ইউরোজোনের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র কি তাহলে উন্নতির পথে এগোচ্ছে?
এই চিত্র কিন্তু মোটেই বাস্তবের প্রতিফলন নয়৷ গত অক্টোবর মাসে এথেন্স সরকার যখন বুক ফুলিয়ে বলেছিল যে, গ্রিস শীঘ্রই আইএমএফ-এর খবরদারি থেকে নিজেকে মুক্ত করবে, তখন বাজারে সে দেশের বন্ডের মূল্য হুহু করে বেড়ে গিয়েছিলো৷ মন্দার ফলে গত পাঁচ বছরে গ্রিসের অর্থনীতির আকার-আয়তন প্রায় এক পঞ্চমাংশ কমে গেছে৷ সেই প্রেক্ষাপটে সামান্য প্রবৃদ্ধি কিছুটা সান্ত্বনা ছাড়া কিছু হতে পারে না৷ কোনো দেশে বেকারত্বের হার ২৮ শতাংশের মাত্রা ছুঁলে তারপর তা মাত্র অর্ধ শতাংশ কমলেও মানুষ তা টের পায় না৷
এখনো ভীত বেশ দুর্বল
সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে গ্রিস এতকাল যে প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে, তাকে খাটো না করেও বলতে হয় যে, ভবিষ্যতের জন্য এখনো ভীত তেমন শক্ত হয়নি৷ রোগীর প্রাণসংশয় না থাকলেও তার অবস্থা এখনো ‘ক্রিটিকাল'৷ গ্রিসের রক্ষণশীল ও সামাজিক গণতন্ত্রী দলের জোট সরকার সঙ্গত কারণেই ইতিবাচক খবরগুলিকে অতিরঞ্জিত করে পেশ করছে৷ এই বার্তার মূল লক্ষ্য গ্রিসের ভোটাররা৷ সংসদে সরকারের শরিক দলগুলির ঝুলিতে ১৮০টি আসন নেই, যা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজন৷ এমন অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী আগাম নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়৷ সব জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী আলেক্সিস সিরপাস-এর নেতৃত্বে বিরোধী বামপন্থি দল প্রায় ৫ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে৷
অর্থাৎ রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী আন্টোনিস সামারাস-এর দ্রুত সাফল্যের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে তিনি আবার তাঁর পুরানো সমর্থকদের মন জয় করতে পারেন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে সেই কাজ বড়ই কঠিন৷ গ্রিসের প্রবৃদ্ধির পথ এখনো বড়ই ভঙ্গুর৷ জং ধরা প্রশাসন যন্ত্রের সংস্কার চলছে অতি ধীর গতিতে৷ কর ফাঁকি দেবার প্রবণতা কমানো সম্ভব হয়নি৷ বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া থমকে গেছে৷ একটানা রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচের ফলে আরও বেশি মানুষ অসহায় বোধ করছে৷ তরুণ প্রজন্ম এক অভূতপূর্ব নৈরাশ্যের মুখে পড়েছে৷ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি গ্রিসে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সংকটের আশঙ্কা করছে৷
রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো বড় সমস্যা
ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অর্থে গত প্রায় চার বছর ধরে গ্রিস এক স্থিতিশীলতা কর্মসূচি চালিয়ে আসছে৷ এমন গুরুতর অবস্থা সত্ত্বেও গ্রিসের রাজনৈতিক দলগুলি দেশের স্বার্থে এক ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে পারেনি৷ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার বদলে এখন তারা সম্ভাব্য আগাম নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধে আসরে নেমেছে৷ এমনকি বিরোধী বামপন্থি দলের শীর্ষ নেতারা ঘোষণা করেছেন যে, তাঁরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন এবং সেই অর্থ দিয়ে আগামী বাজেট সামলাবেন৷ শুনলে মনে হবে, ইউরো এলাকার প্রান্তে প্রাচ্যদেশীয় নাটক চলছে৷ কিন্তু গ্রিসের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কতটা পিছিয়ে রয়েছে, এর মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ গ্রিসের জনগণকে সাহায্য করতে হলে সে দেশের সরকারকে ভবিষ্যতেও কড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে৷