গ্রিস সংকট
৩০ জুন ২০১৫এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সপ্তাহে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী কোথায়? কমপক্ষে গ্রিসের সংবাদপত্রের শিরোনামে তো তাঁকে দেখা যাচ্ছে না৷ তবে তাঁর ঘাড়ে দায় চাপানো বন্ধ করতে পেরেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কয়েক বছর আগেও মাথায় ছুঁচলো হেলমেট বা নাৎসি ইউনিফর্ম সহ তাঁর ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশিত হতো৷ জার্মান চ্যান্সেলর যে সব বার্তা পাঠাচ্ছেন, সেগুলি অত্যন্ত স্পষ্ট – আমরা, জার্মানরা বা আমি জার্মান সরকারের প্রধান হিসেবে ভালমন্দের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না৷ জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য দেশ এবং ইউরোজোনের ১৯টি সদস্য দেশের অন্যতম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে কোনো দেশ একা সিদ্ধান্ত নেয় না, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷
গুরুত্বপূর্ণ এই সপ্তাহের শুরুতে তিনি তাঁর সিডিইউ দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছেন৷ এই উপলক্ষ্যে তাঁর ভাষণে চ্যান্সেলর বলেছেন, ‘‘আপোশ-মীমাংসার ক্ষমতার ভিত্তিতেই ইউরোপ টিকে রয়েছে৷'' সেইসঙ্গে নিয়ম পালন করাও টিকে থাকার আরেকটি কারণ৷ যেমন সংহতি ও নিজস্ব দায়িত্ববোধের মতো নিয়ম৷ নিয়ম ভাঙলে নিজস্ব মূল্যবোধও ভাঙা হয় – এটা ম্যার্কেলের মৌলিক বিশ্বাসের মধ্যে পড়ে৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল যে সতর্কতার সঙ্গে গ্রিস সংকটের সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন, তার জন্য তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে একজনের বাহবা কুড়িয়েছেন৷ প্রাক্তন চ্যান্সেলর ও সামাজিক গণতন্ত্রী দলের হেলমুট স্মিট গত সপ্তাহে বলেছেন, তিনি তাঁর এই উত্তরসূরির আচরণে যথেষ্ট ‘ইমপ্রেসড'৷
হেলমুট স্মিটের বয়স এখন ৯৭৷ বৃদ্ধ এই মানুষটি তাঁর বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতার জন্য শ্রদ্ধার পাত্র৷ তবে কিছু বিষয় বদলে গেছে৷ জার্মানির প্রতি প্রত্যাশা আজ আর আগের মতো নেই৷ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ঘাঁটলে বার বার এই প্রশ্নটি উঠে আসছে – আঙ্গেলা ম্যার্কেল কোথায়? জার্মান প্রেসিডেন্ট, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত প্রায় দেড় বছর ধরে বলে চলেছেন যে, জার্মানিকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে৷ এমন আহ্বান মোটেই জনপ্রিয় নয়৷ গোটা বিশ্বে জার্মানির ভূমিকার প্রশ্ন ও তার উত্তরের ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখা যাচ্ছে না৷
গুরুত্বপূর্ণ এই সপ্তাহের শুরুতে আঙ্গেলা ম্যার্কেল আবার এমন একটি বাক্য বলেছেন, যেটি তিনি নিজেই বহুকাল শুনতে চাননি – ইউরো বিফল হলে ইউরোপও বিফল হবে৷ তবে তিনি এটা বলছেন না, কোন পর্যায়ে মুদ্রা হিসেবে ইউরো-কে বিফল বলা যেতে পারে অথবা তার উপর গ্রিসের আদৌ কোনো প্রভাব থাকবে কিনা৷ তবে এই বাক্যের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে৷ তাই আর রাখঢাক না করে প্রকাশ্যে আসা উচিত৷ বলা উচিত – এখানে আঙ্গেলা ম্যার্কেল দাঁড়িয়ে রয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি ও সবচেয়ে জনবহুল দেশের সরকার-প্রধান দাঁড়িয়ে রয়েছেন – ইউরোপ যাতে বিফল না হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন৷ সহযোগীদের সঙ্গে নিয়েই তিনি সেটা করবেন, তবে প্রয়োজনে নেতৃত্বের ভূমিকাও মেনে নেবেন, যদিও সেই ভূমিকা সব সময় জনপ্রিয় হবে না৷