গ্রিন পোশাক কারখানায় শীর্ষে বাংলাদেশ
২ মার্চ ২০১৮পরিবেশবান্ধব এ ধরনের কারখানার সনদ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)৷ তারা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সনদ দেয়৷ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সনদ পাওয়া বাংলাদেশি কারখানার সংখ্যা ৬৭৷ বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০টি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়৷ অন্যদিকে, ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র পাঁচটি৷
ঢাকায় ইউএসজিবিসি-র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপালকৃষ্ণ পি জানান, অচিরেই বাংলাদেশের আরও ২৮০টি পোশাক কারখানা এলইইডি সনদ পেতে পারে৷ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছেন বলেই এই সাফল্য এসেছে৷
বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে গ্রিন প্ল্যাটিনাম রেটেড তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে সনদ প্রদানের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে গোপালকৃষ্ণ জানান, ‘‘যে কোনো বিবেচনায় বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানা রয়েছে৷''
এলইইডি সনদ পাওয়া ৬৭টি বাংলাদেশি কারখানার মধ্যে ১৩টি প্রথম ক্যাটাগরি, অর্থাৎ প্ল্যাটিনাম ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে৷ বাকিগুলো স্থান পেয়েছে গোল্ড, সিলভার কিংবা সাধারণ ক্যাটাগরিতে৷
কেবল সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানাই নয়, বিশ্বের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোর মধ্যে সেরাদের তালিকায়ও বাংলাদেশের অবস্থান সংহত৷ সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর শীর্ষস্থানীয় ১০টির সাতটিই বাংলাদেশে৷
সেই কারখানাগুলোকেই পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি দেওয়া হয় যেগুলো ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে সক্ষম, যেখানে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা কম হয় এবং যে কারখানা ভবনের স্থাপত্যকাঠামোর কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কম সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়৷
গোপালকৃষ্ণ জানান, ইউএসজিবিসি-তে নিবন্ধিত বাংলাদেশের ৬৫০টি কারখানা-ভবন পরিবেশবান্ধব৷ এগুলোর মধ্যে ৩০৩টি তৈরি পোশাক কারখানার বাইরে৷ সেগুলোর কোনোটি বাণিজ্যিক ভবন, কোনোটি আবার চামড়াজাত পণ্য কিংবা জুতা-স্যান্ডেল তৈরির কারখানা৷ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতে পরিবেশবান্ধব ভবনের সংখ্যা ৩০, যেগুলোর মধ্যে কার্যকর রয়েছে মাত্র পাঁচটি ভবন৷ ভারতকে কারখানা নির্মাণে আরও পরিবেশবান্ধব হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন গোপালকৃষ্ণ৷ তিনি জানান, ‘‘বিশ্বজুড়ে ২০ মিলিয়ন বর্গফুটের ৯০,০০০ সবুজ-প্রকল্প ওয়াশিংটন ভিত্তিক ইউএসজিবিসি-র আওতাধীন৷
প্ল্যাটিনাম সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশি ১৩টি কারখানা হলো – রেমি হোল্ডিং লিমিটেড, তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড, ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড, কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড, ইকোটেক্স লিমিটেড, এনকিউ সেলসিয়াস ইউনিট টু লিমিটেড, কানিজ ফ্যাশন লিমিটেড, জেনেসিস ওয়াশিং লিমিটেড, জেনেসিস ফ্যাশন লিমিটেড, এসকিউ বিডি-চায়না লিমিটেড, এসকিউ কোল ব্ল্যাঙ্ক লিমিটেড এবং এনভয় টেক্সটাইল৷
প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘তৈরি পোশাক উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে সবার থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ তবে আমাদের ইতিবাচক অর্জনগুলো বিশ্ব-মিডিয়ায় তেমন গুরুত্ব পায় না৷'' রেমি হোল্ডিং লিমিটেডের মিরান আলী বলেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কার পরিবেশবান্ধব কারখানা কথা শুনে আসছি৷ তবে মাত্র কয়েক বছর আগে আমাদের উদ্যোক্তাদের একাংশ ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সফলতা পাই৷ এখন বিশ্বে আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি৷''
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘‘প্রাথমিক পর্যায়ে ‘ব্যাক টু ব্যাক লেটার অফ ক্রেডিট'-এর সূচনা খুবই কাজের হয়েছে৷ সেই পথ ধরেই এসেছে আজকের সাফল্য৷
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিশ্বের সেরা ১০টি পোশাক কারখানার ১০টিই বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশের আরো ২৮০টি কারখানা অচিরেই গ্রিন ফ্যাক্টরির সনদ পাবে৷ এগুলো বড় ফ্যাক্টরি৷ প্রতিটি কারখানায় আড়াই থেকে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন৷ আমরা আমাদের ইমেজে বিল্ডআপের জন্য কাজ করে যাচ্ছি৷ কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা যে রানা প্লাজার পর পোশাক শিল্পে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছি, তার তেমন প্রচার নেই৷ তাই বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে৷ বিশ্বকে জানাতে হবে আমাদের এই পরিবর্তনের কথা৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ধ্বসের পর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ২,২০০ ফ্যাক্টরি নিয়ে কাজ করে৷ এখন আমরা বলতে পারি, এই ২,২০০ ফ্যাক্টরিই এখন ‘কমপ্লায়েন্স'৷ আর ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের দেড় হাজার ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০০-৬০০ ফ্যাক্টরির এখনো সংস্কার প্রয়োজন৷ বাকিগুলো সংস্কার এবং পুনর্নিমাণ করা হয়েছে৷ আমি বলতে পারি, বাংলাদেশে আগামী দুই বছরের মধ্যে কোনো নন-কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি থাকবে না৷''
বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে৷ বলতে গেলে অধিকাংশ পোশাক কারখানাই এখন কমপ্লায়েন্স৷ অর্থাৎ কারখানার ভিতরে কাজের পরিবেশ ও অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয়ে উন্নতি হয়েছে৷ কিন্তু শ্রমিকদের জীবন-মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি৷ খরচ বাড়লেও তাঁদের বেতন সেভাবে বাড়েনি৷ তাই শ্রমিকদের ব্যক্তিগত জীবনের কোনো উন্নয়ন হয়নি৷ শুধুমাত্র কারখানার উন্নয়ন হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সর্বশেষ ২০১৩ সালে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয়৷ তখন সর্বনিম্ন মজুরি ছিল ৫,৩০০ টাকা৷ এখনো তাই আছে৷ তবে সরকার পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য আবারো মজুরি বোর্ড গঠন করেছে৷ আমরা আশা করছি এই মজুরি বোর্ড জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন মজুরি ঘোষণা করবে৷ আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলোও প্রস্তাব তৈরি করছি৷ ১৯ এপ্রিল মজুরি বোর্ডের বৈঠক আছে৷ সেখানে আমরা আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরব৷ আমাদের প্রস্তাবে সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকার কম হবে না৷ তবে আমাদের কথা হলো, আমরা মজুরি চাই গ্রহণযোগ্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় অনুযায়ী৷''