গ্রামীণ ব্যাংক বাঁচাতে হবে
৭ নভেম্বর ২০১৩এদিকে, ব্যাংকের পরিচালকদের একজন তাহসিনা খাতুন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ব্যাংকটি বাঁচাতে তাঁরা যা যা করার তাই করবেন৷ প্রয়োজনে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবেন৷
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩ পাস হওয়ায় এখন গ্রামীণ ব্যাংক তাদের আর্থিক হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে বাধ্য৷ এর ফলে ব্যাংকটি কার্যত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল৷ আর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সরকার মনোনীত পরিচালক থাকবেন তিনজন৷ পরিচালক নির্বাচনের কর্তৃত্ব থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে৷
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘এই বিল পাসের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস এখন অবধারিত হলো''৷ তিনি ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ বাদ দিয়ে নতুন এই আইন পাসের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এর ফলে সরকার এখন গ্রামীণ ব্যাংককে একশভাগ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে৷ তিনি বলেন গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টি করা হয়েছিল গরিব নারীদের মালিকানায় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে৷ এই ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ ছিল না৷ নতুন আইনের মাধ্যমে ব্যাংকের মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷
ড. ইউনূস তাঁর বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘‘আমি দুঃখিত যে কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের বিবেচনাহীনতার কারণে জাতির একটি পরম গৌরবের প্রতিষ্ঠানকে এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়ার ঘটনাটি জাতিকে প্রত্যক্ষ করতে হলো''৷ তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এই মৌলিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যাংকটিকে রক্ষার আবেদন জানান৷
এদিকে ব্যাংকের পরিচালক তাহসিনা খাতুন ডয়চে ভেলেকে জানান নতুন বিল পাসের পর তাঁরা ৯ পরিচালক বৈঠক করেছেন৷ বৃহস্পতিবার ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলন করে নতুন আইনটির ব্যাপারে তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন৷ তাঁরা মনে করেন এই আইন কার্যকর হলে ব্যাংকটি সরকারের হাতে চলে যাবে৷ সদস্যদের হাতে থাকবে না৷ তাহসিনা খাতুন বলেন প্রায় ১ কোটি গ্রাহকের এই ব্যাংক তাঁরা কোনোভাবেই সরকারকে দখল করতে দেবেন না৷ তাই গরিব মানুষের এই ব্যাংক রক্ষায় তাদের যা করার তাই করবেন৷ প্রয়োজনে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন৷ তিনি আশা করেন গ্রামীণ ব্যাংক রক্ষার আন্দোলনে তারা শুধু দেশের নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে পাশে পাবেন৷
উল্লেখ্য ১৯৮৩ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু৷ ২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পায়৷ ২০১১ সালের মার্চে সরকার ড. ইউনূসকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়৷ তারপর থেকে এই ব্যাংক নিয়ে চলছে নানা টানাপোড়েন৷