1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুম হওয়া দুই ব্যক্তির পরিবার যা বলছেন

৩০ আগস্ট ২০১৮

বাংলাদেশে নিখোঁজ হওয়া মানুষদের অধিকাংশই আর ফিরে আসে না৷ কারোর লাশ পাওয়া যায়, কেউ জীবিত ফেরার পর চুপচাপ হয়ে যান৷ তবুও এইসব গুম বা অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা স্বজনদের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকেন৷

https://p.dw.com/p/342gC
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/AP Photo

সাজেদুল ইসলাম সুমন ও তাঁর ছয় বন্ধুকে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁদের এক বন্ধুর বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়৷ ঐ এলাকা থেকে পরে আরো দু'জনকে তুলে নেয়া হয়৷ সুমনের ছোট বোন সানজিদা ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘তাঁদের র‌্যাব-১ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়৷ এরপর আমরা র‌্যাবসহ পুলিশের নানা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমার ভাইকে ফেরত পাইনি৷ আমাদের কোনো মামলা বা জিডিও থানা গ্রহণ করেনি৷''

সানজিদা ইসলাম

তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাই ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷ তাঁকে ফেরত পাওয়ার সব পথ বন্ধ হওয়ার পর আমরা হাইকোর্টে রিট করি৷ আমার ভাই এবং আরো ছয় জনের ব্যাপারে তথ্য জানাতে র‌্যাবকে রুলও দেয় হাইকোর্ট৷ কিন্তু তারপরও গত প্রায় ৫ বছরে কোনো খোঁজ মেলেনি৷''

২০১০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের পেছন থেকে অপহরণ করা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মনির হোসেনকে৷ তিনি দক্ষিণখান বিএনপির সহ সম্পাদক ছিলেন৷ তাঁর ভাই মো. শহীদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে পল্টন থানায় জিডি ও পরে মামলা করি৷ পরে আমাদের জানানো হয়, র‌্যাবের একজন কর্মকতা তাঁর বিষয়ে তদন্ত করছেন৷ কিন্তু ঐ পর্যন্তই৷ গত সাত বছরেও আমরা তাঁকে পাইনি৷ বিয়ের মাত্র ৯ মাসের মাথায় আমরা ভাইকে তুলে নিল৷ তাঁকে গুম অথবা হত্যা করা হয়েছে বলে আমার ধারণা৷''

মো. শহীদুল্লাহ

পরিসংখ্যান

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে চলতি বছরের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৩১০ জন গুমের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৪৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৩৩ জন ফেরত এসেছেন৷ বাকিদের কোনো খোঁজ নেই৷

আসকের ভাষ্য মতে, এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী যেমন র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু প্রায়শই সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে৷

অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানা এসব ঘটনায় কোনো অভিযোগ নেয় না, স্বজনরা জিডি করতে গেলেও কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম উল্লেখ করা যায় না বলে জানিয়েছে আসক৷ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই উদ্ধারের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে গুম হওয়ার অনেকদিন পর হঠাৎ করেই তাদের কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় বা ক্রসফায়ারে তাদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়, বলছে মানবাধিকার সংস্থা আসক৷

সংস্থাটি আরো বলছে, সৌভাগ্যবশত কয়েকজনকে ফিরে আসতে দেখলেও কী ঘটেছিলো সে সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ নীরবতা বজায় রেখেছেন৷

আসক বলছে, এখন পর্যন্ত পরিবার দ্বারা উত্থাপিত গুমের অভিযোগসমূহের কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি৷ বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে কি না সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য নেই৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীদের ক্রমাগত দাবির ফলে কেবল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা নারায়ণগঞ্জে সাতজন গুম ও হত্যার বিচারকাজ চলছে৷

আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার' বলছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরে তাদের মধ্যে ৫৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷ ২৪৪ জন ফিরে আসেন৷ বাকিদের এখনো কোনো খবর নেই৷

নূর খান

‘স্বজনরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হন'

এসব বিষয়ে আসক-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাঁরা ফিরে আসতে পারেন তাঁরা চুপচাপ হয়ে যান৷ তারপরও কয়েকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি৷ তাঁরা তাঁদের অপহরণ, রাখার জায়গা এবং তাঁদের সঙ্গে আচরণের যে বর্ণনা আমাদের দিয়েছে তাতে এটা খুবই স্পষ্ট যে, যাঁরা ধরে নিয়ে যায় তাঁরা প্রশিক্ষিত৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘অপহরণের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করা হয়৷ আর অপহরণের পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা থানা পুলিশের কাছে গেলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হন৷ মামলা নেয়া হয়না৷ এমকি নানা অপমানজনক কথাও বলা হয়৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে নূর খান বলেন, ‘‘নিখোঁজ বা অপহরণের পর যাঁদের লাশ পাওয়া যায় তা নিয়ে মামলা বা অনুসন্ধান এগোয়না৷ কাঁরা নিলো, কাঁরা হত্যা করলো তা আর বের হয়না, ধামাচাপা দেয়া হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র এর দায় এড়াতে পারেনা৷ এইসব ব্যক্তি যাঁরা গুম অপহরণের শিকার হয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে দেয়া বা অবস্থান জানানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব৷''

এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান