গুপ্তচরদের শহর বার্লিন
স্নায়ুযুদ্ধের সময়, পূর্ব এবং পশ্চিম ব্লকের সীমান্ত শহর ছিল বার্লিন৷ ফলে বিশ্বের নানা দেশের অসংখ্য গুপ্তচর ঘুরঘুর করতেন বার্লিনে। এই গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস জানতে ঘুরে আসতে পারেন ছবিঘরে দেখানো স্থানগুলো৷
চেকপয়েন্ট চার্লি
অনেকে মনে করেন, পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রসিং পয়েন্ট ছিল চেকপয়েন্ট চার্লি। এই চেকপয়েন্টে ১৯৬১ সালের অক্টোবরে মার্কিন এবং সোভিয়েত সেনারা মুখোমুখি অবস্থান নেয়৷ অনেক বছর পর জানা গিয়েছিল, কার্ল-হাইনৎস কুরাস নামে এক পশ্চিম জার্মান পুলিশ অফিসার পূর্ব জার্মানির গুপ্তচর ছিলেন এবং সোভিয়েতদের কাছে মার্কিন সেনাদের সম্পর্কে তথ্য পাচার করতেন।
গ্লিনিকে সেতু
পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মধ্যে আরেকটি কিংবদন্তী সীমান্ত ক্রসিং গ্লিনিকে সেতু। এখানে বেশ কয়েকবার দু পক্ষের মধ্য়ে বন্দিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে৷ এই সেতুটিকে ‘ব্রিজ অফ স্পাইজ‘ বা ‘গুপ্তচরদের সেতু‘ নামেও ডাকা হতো। ২০১৫ সালে এই চমকপ্রদ ইতিহাস নিয়েই ‘ব্রিজ অফ স্পাইজ‘ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন স্টিভেন স্পিলবার্গ।
বার্লিনের স্টাসি জাদুঘর
পূর্ব জার্মানির কুখ্যাত গুপ্তচর ও নজরদারি সংস্থার নাম ছিল স্টেট সিকিউরিটি মিনিস্ট্রি না স্টাসি৷ পূর্ব জার্মানিতে সেই সংস্থার সদরদপ্তরের ভবনটিকে এখন রূপ দেয়া হয়েছে জাদুঘরে৷ কক্ষগুলোকে তাদের আগের অবস্থায় সংরক্ষণ বা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে৷ পূর্ব জার্মান গুপ্তচর প্রধান এরিক মিলকের ব্যবহার করা ফোনও সংরক্ষিত রয়েছে জাদুঘরটিতে৷ স্টাসির কর্মকাণ্ডের কিছুটা ধারণা এই জাদুঘর থেকে পেতে পারেন দর্শণার্থীরা৷
মারিয়েনফেল্ডে শরণার্থী কেন্দ্র জাদুঘর
পূর্ব জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন পশ্চিম বার্লিনের মেরিয়েনফেল্ডে শরণার্থী কেন্দ্রে। কয়েক দশকে এই কেন্দ্রে প্রায় ১৩ লাখ শরণার্থী অবস্থান করেছেন। এই কেন্দ্রে যারা থাকতে চাইতেন, তাদের পশ্চিমা গোয়েন্দারা আগে পরীক্ষা নীরিক্ষা করতেন এবং পূর্ব জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে গোপন তথ্য জানার জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো৷
টিউফেলসবার্গ লিসেনিং পোস্ট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত টিউফেলসবার্গ লিসেনিং পোস্টটিও দর্শনীয় একটি স্থান। বার্লিনের গ্রুনেভাল্ড জেলায় অবস্থিত এই স্থাপনাটি ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ পূর্ব ব্লকে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য তৈরি করেছিল। এখন স্থাপনাটির ধ্বংসাবশেষ দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত৷
মিত্রশক্তি জাদুঘর
মিত্রশক্তি জাদুঘরটি বার্লিনের সেহলেনডর্ফ জেলায় অবস্থিত এই এলাকাটি একসময় অ্যামেরিকান সেক্টর নামে পরিচিত ছিল৷ এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তেজনাপূর্ণ স্নায়ুযুদ্ধ যুগের বর্ণনা পাওয়া যাবে এই জাদুঘরে। দর্শণার্থীরা বিনামূল্যেই প্রবেশ করতে পারেন৷ সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে একটি সুরঙ্গ৷ এটি সোভিয়েত বাহিনীর ওপর গোয়েন্দাগিরির জন্য তৈরি করেছিল ব্রিটিশ এবং মার্কিনিরা৷
জার্মান গুপ্তচর জাদুঘর
এই জাদুঘরের অবস্থান পটসডামার প্লাৎসের কাছে৷ বার্লিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা প্রাচীরটি এখান দিয়েও গিয়েছিল৷ কয়েক যুগ আগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্ত গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহৃত নানা আকর্ষণীয় বস্তু প্রদর্শন করা হয় এই জাদুঘরে৷ এছাড়াও অনেক ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী থাকায় জাদুঘরটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সমানভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
জার্মানির বিদেশি গুপ্তচর কেন্দ্র
বহির্বিশ্বে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি এর নবনির্মিত সদর দপ্তর বার্লিনে উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালে। প্রায় তিন হাজার কর্মী এই ভবনটি থেকেই বিশ্বের নানা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন৷ তবে মজার বিষয়, গোপনীয়তার বেড়াজালে ঢাকা এই ভবনটিতেও রয়েছে একটি দর্শনার্থী কেন্দ্র, যা ঘুরে আসতে পারেন আপনিও।