দিল্লিতে মোদী
১৮ মে ২০১৪গুজরাট ছেড়ে শনিবার (১৭.০৫.১৪) ভারতের ভাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পা রাখলেন দিল্লির মাটিতে৷ সামিল হলেন বিজয় মিছিলে৷ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে মোদীর কনভয় পৌঁছোয় বিমানবন্দর থেকে অশোক রোডে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি'র সদর কার্যালয়ে৷ রাস্তার দু'পাশে হাজার হাজার কর্মী ও সমর্থকদের উল্লাস, উচ্ছ্বাস আর জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস৷ মোদীর মুখে পরিচিত সেই মৃদু হাসি আর দুই আঙ্গুলে বিজয়ীর মুদ্রা৷
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ২০ মে
মোদী নতুন দিল্লিতে যোগ দেন বিজেপি সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে৷ সেখানে ঠিক হয়েছে সংসদীয় বৈঠক বসবে আগামী ২০ মে৷ সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে৷ শপথ গ্রহণের দিনও ঠিক করা হবে৷ মন্ত্রিসভা গঠন নিয়েও প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে বৈঠকে৷ বিজেপি কার্যালয়ে বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদী যান তাঁর দ্বিতীয় নির্বাচনি কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের তীর্থভূমি বেনারস বা বারাণসীতে৷ সেখানেও ভাবি প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল কড়া নিরাপত্তা৷
এদিকে, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং তাঁর মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন৷ পরে জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘দেশভাগের এক অবহেলিত সন্তান হিসেবে আমি যা কিছু পেয়েছি সবই ভারতে৷ ১০ বছরের শাসনে দেশের জন্য যা কিছু করতে পেরেছি সবই দেশবাসীর কাছে খোলা খাতা৷''
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
মোদীর এই ঐতিহাসিক জয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা আসছে অবিরাম৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সমীকরণের ডাক দিয়েছেন৷ প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া শুক্রবারই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন৷
দিল্লির রাজনৈতিক মহল মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির অচলাবস্থা কেটে যাবার একটা সম্ভাবনা হয়ত তৈরি হতে পারে৷ দু'দেশের ঐতিহাসিক মৈত্রী সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হুমকিকে ততটা আমল দেবেন না মোদী দেশের বৃহত্তর স্বার্থে৷ পাশাপাশি তথাকথিত বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইস্যু নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দেয় সেখানে মোদীর মন্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে৷
মমতার অভিযোগ ছিল, ‘‘মোদীর মতে, বাংলাদেশি হিন্দুরা শরণার্থী আর বাংলাদেশি মুসলিমরা অনুপ্রবেশকারী৷'' দিল্লি মনে করে, এটা মোদীর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা৷ দেশের পররাষ্ট্র নীতির একটা ধারাবাহিকতা মেনে চলতে হয়৷
প্রধান ইস্যু সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রধান ইস্যু সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ৷ সেটাতে লাগাম দিতে না পারলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবার আশা কম৷ ২৬/১১ মুম্বই হামলার সন্ত্রাসীদের আজও শাস্তি হয়নি৷ মোদী সরকার সেজন্য পাকিস্তানকে রেয়াত করবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ কারণ বাজপেয়ীর শান্তি মিশনে কাজ হয়নি৷
স্বরাষ্ট্র ক্ষেত্রে মোদীকে দেখাতে হবে ভারতের সার্বিক বিকাশে তাঁর অঙ্গীকারের সফল বাস্তবায়ন৷ দমন করতে হবে ব্যাপক দুর্নীতি৷ এই ইস্যুতেই মনমোহন সিং সরকার নিজেদের কবর খুঁড়েছিল নিজেরাই৷ প্রধানমন্ত্রীর নাকের ডগায় ঘটে গেছে টু-জি, কোলগেট, কমনওয়েলথ গেমস, ভিভিআইপি হেলিকপ্টার ইত্যাদির মত ‘মেগা কেলেঙ্কারি'৷ বাড়াতে হবে আর্থিক প্রবৃদ্ধি যেটা কংগ্রেস-জোট সরকারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল৷ লাগাম দিতে হবে মুদ্রাস্ফীতিতে৷
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানদের সঙ্গে নিয়ে চলা৷ গোড়াতেই দূর করতে হবে সংখ্যালঘু সমাজের বিচ্ছিন্ন মনোভাব৷ মুসলিম সমাজকে বোঝাতে হবে তোমরা আমাদেরই লোক৷ দরকার হলে হিন্দুত্ববাদী তকমাটা আলগা করে সঙ্ঘপরিবারকে না চটিয়ে একটা সমন্বয় সাধন করে চলতে হবে মোদীকে৷