1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গান তুমি হও

৩ এপ্রিল ২০১৮

তিনি নিজেও অসাম্প্রদায়িক৷ তাঁর চেতনায় গান কখনও হয়ে ওঠে দাবানল, কখনওবা শান্তিসুধা৷ পুত্রহারা ইমামের সান্ত্বনায় যখন নেতারা মলম লাগাতে ব্যস্ত, কবীর সুমন সুর ধরেছেন, লিখছেন গান৷  

https://p.dw.com/p/2vP4f
Kabir Suman
ছবি: privat

একবছরও হয়নি৷ তার আগেই ফের আমাদের নিজেদের ছলনা বিশ্বের কাছে ধরা পড়ল৷ যতই বলি না কেন, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, আসলে রাজনীতি আমাদের মাথা চিবোচ্ছে৷ ঠিক যেমন ১৯৪২-এ কলকাতার দাঙ্গায় ইংরেজ চিবিয়েছিল হিন্দু মুসলমানের মাথা৷ গতবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিকৃত পোস্ট শেয়ার নিয়ে বাদুড়িয়ায় যে ধুন্ধুমার শুরু হয়েছিল৷ এবার রানিগঞ্জ আসানসোলের ঘটনায় তারই পুনরাবৃত্তি হলো৷ যেন চক্র সম্পূর্ণঁ হলো৷

ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দাপট অনেকদিনের৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তাদের পায়ের তলার মাটি শক্ত ছিল না৷ লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমি তৈরি করতে মরিয়া গেরুয়া শিবির৷ তার ফলই কি ভুগছে পশ্চিমবঙ্গ?­­

রানিগঞ্জ-আসানসোলের সাম্প্রদায়িক ঘটনার পাশাপাশি এবার উঠে এলো ইমাম মাওলানা ইমদাদুল রাশিদির নাম৷ রামনবমী পালনের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদীদের আস্ফালন তাঁর শান্ত শোকার্ত কন্ঠস্বরে চাপা পড়ে যায়৷

রাজনীতির নাগিনীরা দিকে দিকে যখন বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে, বিজেপি শিবির উত্তরপ্রদেশের ব্যর্থতা ঢাকতে ত্রিপুরা বা পশ্চিমবঙ্গে বিষদাঁত ফোটানোর চেষ্টা করছে, এমন পরিস্থিতিতে ইমাম ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন বিদ্বেষ রুখতে৷ তাঁর কন্ঠে সেই বাণীই বেরিয়েছে, যা যুগে যুগে গৌতম বুদ্ধ, কবীর বা নানকের বাণী বলে আমরা মেনে এসেছি৷ কবীর সুমন তাই তাঁর মধ্যে ঐশ্বরিক সত্ত্বা খুঁজে পেয়েছেন৷     

ঐশ্বরিক সত্তার প্রকাশ আপেক্ষিক তো বটেই৷ ধর্মের ধ্বজা হাতে তুলে ভোটের বৈতরণী পার হতে যাদের অস্ত্র সাম্প্রদায়িকতা, তারাই বাবরি মসজিদ ভাঙার পর কলকাতায় এসে ঐশ্বরিক সত্তার বর্ণনা দেয়, ‘‘ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না. যদি আমরা ঠিকাদার নিয়োগ করতাম এই সৌধ ভাঙার জন্য, তাহলেও কমপক্ষে দেড়মাস সময় লাগতো ভাঙতে৷'' 

২৬ বছর আগের সতর্কবার্তা এবার ঘুরে আসছে বিষাক্ত সাইক্লোন রূপে৷ অথচ ভারতী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,  ‘‘বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান যখন ঘনিষ্ঠপ্রতিবেশী, পরস্পরের সুখ-দুঃখ নানা সূত্রে বিজড়িত, একের গৃহে অগ্নি লাগিলে অন্যকে যখন জল আনিতে ছুটাছুটি করিতে হয়, তখন শিশুকাল হইতে সকল বিষয়েই পরস্পরের সম্পূর্ণ পরিচয় থাকা চাই৷ বাঙালি হিন্দুর ছেলে যদি তাহার প্রতিবেশী মুসলমানের শাস্ত্র ও ইতিহাস এবং মুসলমানের ছেলে তাহার প্রতিবেশী হিন্দু শাস্ত্র ও ইতিহাস অবিকৃতভাবে না জানে তবে সেই অসম্পূর্ণ শিক্ষার দ্বারা তাহারা কেহই আপন জীবনের কর্তব্য ভালো করিয়া পালন করিতে পারিবে না৷''

আমরা এ সত্য না দেখার ভান করে এসেছি৷ বরং একে অপরের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছি৷ পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, বাংলাদেশেও একই ছবি৷ পাঁচ বছর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর যখন ঢালাও পুড়িয়েছে জামায়েত শিবির, সেখানে অনেক হিন্দু পরিবারকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন এলাকারই মুসলমানরা৷ আবার পশ্চিমবঙ্গের বাদুড়িয়া কাণ্ডের পর এলাকার মুসলমানরা যত্ন করে খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছেন শাঁখা-সিঁদুর পরা আশ্রিত হিন্দু রমনীদের৷ তাঁদের দলেই ইমাম রাশিদি সাহেব পড়েন৷ তবে তাঁর তরতাজা ১৬ বছরের ছেলের পুত্রশোক তাঁকে আরও মহান করেছে৷

Payel Samanta
পায়েল সামন্ত, ডয়চে ভেলেছবি: DW/D. Guha

রামরাজ্যের কথা যাঁরা বলেন, তাঁরাও জানেন পুত্রহারা অন্ধমুনি পুত্রশোকে দশরথকে অভিশাপ দিয়েছিলেন৷ সে যুগেও প্রতিশোধের আগুনে ঝলসে উঠেছিলেন শোকাকুল পিতা৷ কিন্তু পুত্রশোক ইমামকে সে পথে চালিত করেনি৷ যিশুর মতো কাঁটার মুকুট পরেছেন তিনি৷

সুমন গান গাওয়ার আগে তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন৷ সেটা হতেই পারে৷ সারা ভারত তো আর উত্তরপ্রদেশের খেরা সধন গ্রাম নয়, রাজনীতির কালো হাত যেখানে সাম্প্রদায়িক চেতনা উসকাতে পারে না৷ আর এই উত্তরপ্রদেশেই পিছপা হয়ে বিজেপির আগ্রাসন শুরু হয়েছে বাংলায়৷ এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে যাঁদের লড়ার কথা, সেই বামপন্থিরা ত্রিপুরায় হেরে গিয়ে একেবারে হতমান হয়ে গিয়েছে৷ আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার এ রাজ্যের ২৫ শতাংশ ভোটের ওপর ভীষণই নির্ভরশীল, তাই তিনি তোষণের রাজনীতিতে চলছেন৷ সে কারণেই লড়ার অস্ত্র ধরে নিন শিল্পী সাহিত্যিকরা৷

কবীর সুমনেরগান তুমি হও বেঁচে থাকার রসদ সবার কাছে...' 

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান