গাদ্দাফির অবস্থান রহস্যঘেরা, রিক্সস থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের মুক্তি
২৫ আগস্ট ২০১১লিবিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র বাব আল-আজিজিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী৷ এরপর থেকেই বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সরকারি ঐ কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে নানা মূল্যবান জিনিস, অস্ত্রশস্ত্র এবং দলিলপত্র লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া ঐ ভবন দখলের পর থেকে উল্লাসে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আকাশকে বারুদময় করে তুলেছে বিদ্রোহীরা৷ তবে বুধবার ভবনের বাইরে থেকে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয় বলে বিদ্রোহীরা জানিয়েছে৷ এছাড়া আল মানসুরা ও রিক্সস হোটেল এলাকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিদ্রোহীদের উপর সেনা হামলার খবর পাওয়া গেছে৷
গাদ্দাফির অনুগত সেনা সদস্যদের সাথে বিদ্রোহীদের লড়াই
অধিকাংশ এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে থাকলেও শহরটির বেশ কিছু জায়গায় এখনও গাদ্দাফির অনুগত সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ কারণ থেমে থেমে মাঝে মাঝেই উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে৷ এছাড়া বিদেশি সাংবাদিকদের অবস্থান স্থল রিক্সস হোটেল এখনও দখল করে রেখেছে গাদ্দাফির অনুগত বাহিনী৷ পাঁচ দিন থেকে ঐ হোটেলে সাংবাদিকদের আটকে রাখলেও বুধবার দিনের শেষে রিক্সস হোটেল থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়৷
বিদ্রোহী সূত্র বলছে, মঙ্গলবার রাতে গাদ্দাফির অনুগত সেনাদের হামলায় অন্তত চার বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত হয়েছে৷ ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল এনটিসি'র প্রধান মুস্তাফা আব্দেল জলিল বুধবার জানান, শুধুমাত্র রাজধানী ত্রিপোলির লড়াইয়ে চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো দুই হাজার জন৷
গাদ্দাফি এবং তাঁর পরিবারের অবস্থান অজানা
এখন পর্যন্ত গাদ্দাফি কিংবা তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবস্থান জানা যায়নি৷ বাব আল আজিজিয়া ভবনের ভেতরে গিয়েও বিদ্রোহীরা সেখানে কাউকে পায়নি৷ একদিন আগে গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল ইসলাম রিক্সস হোটেলে দেখা দিলেও তাঁরও আর কোন হদিস নেই৷ অবশ্য অজ্ঞাত স্থান থেকে অডিও বার্তা পাঠানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন গাদ্দাফি৷ বুধবার গণমাধ্যমে গাদ্দাফির দু'টি অডিও বার্তা প্রচার করা হয়েছে৷ এগুলোতে তিনি বলছেন, তিনি সবার অজ্ঞাতসারেই ত্রিপোলির পথে ঘুরেছেন৷ তিনি নিজের জন্য কোন ভয়ের কিছু দেখেননি৷ লিবিয়ার সকল নারী-পুরুষের প্রতি তিনি - তাঁর কথায় - ‘দেশদ্রোহীদের' বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এই বার্তায়৷ অবশ্য মুয়াম্মার গাদ্দাফি ত্রিপোলিতেই কোথাও আছেন এমনটি মনে করছে বিদ্রোহীরা৷ তাদের মুখপাত্র আব্দেল রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ত্রিপোলির আল হাসবা আল খাদরা এলাকায় গাদ্দাফি অবস্থান করতে পারে৷ ঐ এলাকায় সেনা সদস্যদের সাথে বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
এনটিসি এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া
গাদ্দাফিকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং আগামী আট মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন আব্দেল জলিল৷ এছাড়া এনটিসি অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদ্রোহী নেতা মাহমুদ জিব্রিলকে দায়িত্ব প্রদান করেছে৷ আর জিব্রিল’এর আজ ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজির সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে৷ জানা গেছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়া পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার বিষয়ে সার্কোজির সাথে কথা বলবেন জিব্রিল৷ অবশ্য লিবিয়া পুনর্গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বুধবার এই সহায়তার ঘোষণা দেন৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক